দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার বিজ্ঞানীরা বলেছেন সম্প্রতি পৃথিবীতে আবারও এক গণবিলুপ্তি ঘটবে। সেই ঘটনায় অন্য প্রাণীদের সঙ্গে সব মানুষও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। শুধু তা-ই নয়, কবে নাগাদ সেই গণবিলুপ্তি ঘটবে সেটিও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা!
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীতে কোনো প্রাণী কিংবা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। তাদের এক সময় বিলুপ্তি ঘটবেই। এটিই প্রকৃতির এক নিয়ম। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো কোনো সময় গণবিলুপ্তিও ঘটেছে। যাকে ‘মাস এক্সটিঙ্কশন’ বলা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মহাকাশের গ্রহাণু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে বহু প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটালে তাকে ‘মাস এক্সটিঙ্কশন’ কিংবা গণবিলুপ্তিও বলা যায়।
এ পর্যন্ত পৃথিবীতে অন্তত ৫ বার এরকম বিপর্যয় ঘটেছে যা গ্রাস করেছিলো গোটা প্রাণীকুলকেই। এতে অধিকাংশ স্থল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো।
যারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গণবিলুপ্তিটি ঘটে ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর পূর্বে। একটি গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী হতে বিলুপ্ত হয়ে যায় ডাইনোসর প্রজাতি। পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়ানো এই প্রজাতির বিলুপ্তি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে দেশে দেশে।
তবে বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, ওটিই শেষ নয়, পৃথিবী আরেকটি অর্থাৎ ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির সময়টি পার করছে। এর কারণ হলো কোনো গ্রহাণু নয় বরং মানব সভ্যতা মূলত নিজেই। পরিবেশ এবং প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে মানুষ মূলত নিজেই বাসযোগ্য এই পৃথিবীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে।
নতুন এক গবেষণা বলছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণের পরিণাম হিসেবে পৃথিবীর পরবর্তী গণবিলুপ্তিও ঘটবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এই গণবিলুপ্তি দ্রুততরই হবে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের একদল গবেষক গবেষণাটি চালান। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, একাধিক কম্পিউটার সিমুলেশন বলছে যে, পৃথিবী একটি গণবিলুপ্তির মুখোমুখি হবে, যে কারণে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এই গণবিলুপ্তি কবে শুরু হবে সেই বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, আগামী ২৫ কোটি বছরের মধ্যেই পৃথিবীতে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ওই প্রতিবেদন আরও বলছে যে, মানুষ যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এখনই একেবারেই বন্ধ করে দেয় তাহলেও উক্ত সময়ের মধ্যে সেটি ঘটবেই।
বিজ্ঞানীদের একটি অংশ বলছেন যে, পরিবেশ এবং প্রকৃতি ধ্বংস তথা বনজঙ্গল উজাড় এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের মতো কিছু কারণে গ্রিসহাউস গ্যাস বিশেষ করে কার্বন নির্গত হচ্ছে। যে কারণে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ কিংবা গরম হয়ে উঠছে। যা জলবায়ু পরিবর্তনও ঘটাচ্ছে।
যদি মানুষ পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ না করে পৃথিবীর এই উষ্ণায়ন ক্রমেই বাড়তেই থাকবে।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের গবেষকরা বলেছেন যে, আগামী ২৫ কোটি বছর সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে জীবিত যে কোনো প্রাণিকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে ১৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট কিংবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও মোকাবিলা করতে হবে।
গবেষণা প্রতিবেদন হতে এটা স্পষ্ট যে, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের পক্ষে সহ্য করা কখনও সম্ভব হবে না। যে কারণে এইসব প্রাণী গণহারে মারা পড়বে। যার মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে যাবে গণবিলুপ্তি।
নতুন গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের স্কুল অফ জিওগ্রাফিক্যাল সায়েন্সেসের সিনিয়র গবেষণা সহযোগী ড. আলেকজান্ডার ফার্নসওয়ার্থ। তিনি বলেছেন যে, ‘দূর ভবিষ্যতের দৃশ্যটা খুব অন্ধকার এবং অনিশ্চিত মনে হচ্ছে। কার্বনের মাত্রা এখনকার চেয়ে দ্বিগুণও হতে পারে। অন্যান্য অনেক প্রজাতির সঙ্গে মানুষ ওই দাবদাহের সঙ্গে অভিযোজনও করতে পারবে না। যে কারণে তারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ইতিপূর্বে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়, প্রাণীকুলের বিভিন্ন প্রজাতি তার স্বাভাবিক গতির চেয়েও ৩৫ গুণ বেশি গতিতে গণবিলুপ্তির পথেই হাঁটছে। প্রত্যেক বিলুপ্তির সময় অনেক প্রজাতি হারিয়ে যায়। অপরদিকে কিছু কিছু প্রজাতি টিকেও থাকে। মানুষ যদি মনে করে যে, হারিয়ে যাওয়ার এই চক্রে শুধু তারা বেঁচে থাকবে, তবে সেই ধারণাও হবে ভুল।
ওই সমীক্ষার সহকারী লেখক জেরার্ডো সেবেলোস বলেছেন, পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া এই শূন্যস্থান অবশ্যই পূরণ হবে। তবে প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যের মধ্যে কারা টিকে থাকবে কারা হারিয়ে যাবে সেটি বলা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
গত বছর প্রায় কাছাকাছি সময় আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘বায়োলজিক্যাল রিভিউজ’-এ প্রকাশিত পৃথক এক গবেষণায় বলা হয় যে, পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর সর্বনাশের এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে ক্রেটাসিয়াস যুগের পর প্রাণের গণহারে বিলুপ্তির ষষ্ঠ পর্যায় শুরু হয়ে যায় খুব কম করে হলেও ৭০০ বছর পূর্বে তথা ১৫০০ শতক থেকে।
গবেষণায় আরও বলা হয় যে, পৃথিবীর চেনা-জানা ২০ লাখ প্রাণী এবং উদ্ভিদের সাড়ে ৭ থেকে ১৩ শতাংশই ইতিমধ্যে গণহারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেভাবে এক সময় হারিয়ে গিয়েছিলো ডাইনোসর প্রজাতি। সূত্র: ডেইলি মিরর ও সিএনএন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org