দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হার্ড অ্যাটাক অর্থাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া ১০ জনের মধ্যে ন’জনই মারা যান। তবে সময়মতো সিপিআর দেওয়া গেলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা কয়েক গুণই বেড়ে যায়। সিপিআর কীভাবে দিলে রোগীর প্রাণ বাঁচবে, তা জেনে রাখাটা জরুরি।

হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে ভয় কাটিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক আগে থেকেই। তবে রাতবিরেতে বাড়ির কারও আচমকা হার্ট অ্যাটাক হলে আতঙ্ক হবে সেটিই স্বাভাবিক। কাছেপিঠে হাসপাতাল না থাকলে কিংবা অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেরি হলে আপনাকে কী করতে হবে, তা জেনে রাখা খুব জরুরি একটি বিষয়।
এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সময়মতো সিপিআর কিংবা ‘কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসিটেশন’ দেওয়া গেলে তা জীবনদায়ীও হয়ে উঠতে পারে। সেন্টার্স ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, হাসপাতালের বাইরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই মারা যান। তবে সময়মতো সিপিআর দেওয়া গেলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনাও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
সিপিআর কীভাবে দিতে হবে তার নিয়ম রয়েছে। এই বিষয়ে হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানিয়েছেন যে, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ আপনাকে আগে বুঝতে হবে। যদি দেখেন যে, শ্বাস নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে, হঠাৎ দরদর করে ঘামছেন রোগী, বুকের কষ্ট ক্রমশ হাত, কাঁধ এবং চোয়ালে ছড়িয়ে পড়ছে বা জ্ঞান হারিয়েছেন, তাহলে দেরি না করে আগে অ্যাসপিরিন কিংবা সরবিট্রেট জাতীয় ওষুধ দিন। এরপর রোগীর পাল্স দেখে সিপিআর দিতে পারলে ভালো হয়। সিপিআরের প্রশিক্ষণ থাকলে ভালো, না হলে কীভাবে দিতে হবে জেনে নিন।
সিপিআর দেওয়ার পদ্ধতি
# প্রথমেই কোনও সমতল জায়গায় রোগীকে শোয়াতে হবে।
# তারপর পরীক্ষা করতে হবে ক্যারোটিড পাল্স। গলার মধ্যে যে শক্ত হাড় কিংবা ‘অ্যাডাম্স অ্যাপেল’ রয়েছে সেই অংশে এই পাল্স থাকে। সেখানে দু’টি আঙুল রেখে অপরটি নীচের দিকে নামাতে হবে। আঙুল যে জায়গায় পৌঁছাবে, সেখানে থাকে ক্যারোটিড পাল্স। সেখানে কোনও স্পন্দন না পেলেও সিপিআর দেওয়া শুরু করতে হবে।
# রোগীকে চিত করে শুইয়ে তার বুকের ঠিক মাঝ বরাবর বিশেষ স্পন্দনে চাপ দিতে হবে। এমন চাপ দিতে হবে যাতে করে সেই চাপ হদযন্ত্রকে আবারও সচল হতে পারে। এটিকে বলা হয় ‘চেস্ট কমপ্রেশন’।
# ডানহাতি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডান হাতের তালুর নীচের অংশটিও রাখতে হবে বুকে, সেই হাতের উপর রাখতে হবে অপর হাত। কনুই ভাঁজ না করে হাত সোজা রেখে রোগীর বুকে চাপ দিতে হবে।
# এমনভাবে বুকে চাপ দিতে হবে যাতে ৫-৬ সেন্টিমিটার নিচু হয় বুকের খাঁচা। আবারও হাত ছাড়তে হবে, যাতে খাঁচা আগের অবস্থাতে ফিরে আসে।
# বুকে চাপ দেওয়ার পদ্ধতি এতোটাই দ্রুত গতিতে করতে হবে, যাতে করে এক মিনিটে ১০০-১২০ বার একই পদ্ধতিতে পাম্প করা যায়। টানা অন্তত ২ হতে ৫ মিনিট পাম্প করে যেতে হবে।
# যদি তাতেও রোগীর হৃৎস্পন্দন না ফেরে, তাহলে মোট ২০ মিনিট পর্যন্ত এই সিপিআর দেওয়া যেতে পারে।
# আর যদি ছোটদের সিপিআর দিতে হয়, সেইক্ষেত্রে বুকে অত চাপও দেওয়া যাবে না। আর বয়স ৮ বছরের কম হলে, সিপিআর মোট ৩০ বার দিতে পারলে ভালো হয়। তাতেও স্পন্দন না ফিরলে এক হাতে শিশুর নাক চেপে অন্য হাতে থুতনি উপরে তুলে ধরার পর মুখে মুখ লাগিয়ে জোরে জোরে হাওয়া দিতে হবে। এতে করে অক্সিজেন ঠেলে ফুসফুসে ঢুকবে। সঙ্কটজনক মুহূর্তে এই ধরনের সিপিআর দীর্ঘ সময় ওইসব রোগীর শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বজায়ও রাখতে পারে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org