দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে কি এমনটি ভাবা যাবে? অথচ চীনের একটি শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই! ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াই চলছে পুরো শহর। কোন দুর্ঘটনা নেই, নেই কোন যানজট -নিটেন ক্লিন শহর!
ফ্লাইওভারের শহর গণ চীনের প্রাদেশিক শহর গোয়াংঝু। শহরটির প্রতিটি প্রধান রাস্তায় রয়েছে ফ্লাইওভার। রয়েছে ফ্লাইওভারের ওপরে ফ্লাইওভার। দোতলা ও তিনতলা ফ্লাইওভারে গোয়াংঝু শহরকে করা হয়েছে যানজটহীন। ফ্লাইওভার ছাড়াও গোয়াংঝু শহরে রয়েছে পাতাল রেল, রয়েছে পাহাড়ের নিচে টানেল। কোথাও ট্রাফিক পুলিশের দেখা পাওয়া যাবে না। তবে যানবাহন চলাচলে নজরদারি করার জন্য মোড়ে মোড়ে বসানো আছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। এ শহরের সব রাস্তায় গাড়ি চালাতে হয় ডান দিকে।
সব ধরনের যান চলাচল করে এ শহরের রাস্তায়। অপেক্ষাকৃত কম গতির যানগুলো ফ্লাইওভারে ওঠেনা অথবা উঠতে পারে না। নিচের রাস্তায় সাইকেল, ব্যাটারি-চালিত সাইকেল অথবা তিন চাকার ব্যাটারি-চালিত গাড়ি চলাচল করে। গোয়াংঝু শহরে গেলে সাইকেল ছাড়া কোনো রিকশা অথবা এ জাতীয় কোনো যানবাহন চোখে পড়বে না।
কমিউনিস্ট দেশ হওয়া সত্ত্ব্বেও গোয়াংঝু শহরে বিদেশী গাড়ির প্রাধান্য চোখে পড়ার মতো। দেশীয় গাড়ি কমই দেখা গেছে। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, টয়োটা, নিশান, হিউন্দাই, ফোক্স ওয়াগনের মতো গাড়িই সবচেয়ে বেশি চলাচল করে সেখানে। এগুলো যে সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে তা নয়। এসব ব্র্যান্ডের অনেক গাড়িই চীনে তৈরি হয়। চীনা সস্তা প্রযুক্তি, সস্তা শ্রম এবং সেই সাথে দেড় শ’ কোটি মানুষের বাজার ধরতে বিখ্যাত গাড়ি কোম্পানিগুলো চীনে কারখানা স্থাপন করেছে। এখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় গাড়ি রফতানি করা হয়। আবার দেশীয় বাজারেও বিক্রি হচ্ছে এসব গাড়ি। এসব ছাড়াও আছে নিজেদের তৈরি বিলাসবহুল বাস। এসি ছাড়া কোনো বাস দেখা যাবে না।
বাসগুলো সিটের বাইরেও দাঁড়ানো যাত্রী বহন করে থাকে। তবে তা ঢাকা শহরের মতো নয়। দাঁড়ানো যাত্রী বহন করলেও বড় বাসগুলোতে কোনো সময় ১০-১২ জনের বেশি দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায় না।
ট্রাফিক জট না থাকলেও গোয়াংঝু শহরের কিছু দূর পরপরই রয়েছে ঢাকা শহরের মতো মোড়। কোনো মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। লালবাতি জ্বলা থাকলে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সবুজ বাতি জ্বললে গাড়িগুলো আবার চলতে শুরু করে নিজেদের মতো করে। এমনও দেখা যায়, লালবাতির সময়ে সামনে, ডানে অথবা বামে কোনো গাড়ি না থাকলেও কেও আইন ভঙ্গ করে না।
ফ্লাইওভারে চড়তে হলে পকেটে টাকা থাকতে হয়। কারণ টাকা ছাড়া কোনো ফ্লাইওভারে ভ্রমণ করা যায় না। একবার ফ্লাইওভারে উঠলে যেখান দিয়ে নেমে গন্তব্যে যেতে হবে সেখানে নিচের রাস্তায় টোল সংগ্রহের বুথ বসানো। টোল পরিশোধ ছাড়া কেও বের হতে পারবে না। অবশ্য যারা ফ্লাইওভার ব্যবহার করেন তাদের সবাই পকেটে টাকা নিয়েই বের হন।
ফ্লাইওভারগুলো অনেক সময় পাঁচতলা ভবনের চেয়ে বেশি উচ্চতাসম্পন্ন। যেখানে এর চেয়ে বেশি উচ্চতায় যেতে হয়েছে সেখানে ওপর থেকে নিচের দিকটা যেন দেখা না যায় সে জন্য টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে আবাসিক ভবনের পাশ দিয়ে ফ্লাইওভার গিয়েছে সেখানেও এভাবে বেড়া দেয়া হয়েছে।
অথচ আমাদের দেশের কথা একবার চিন্তা করুন? রাজধানীর ঢাকার প্রতিটি রাস্তা সেটি ভিআইপি হোক আর সাধারণ রাস্তা হোক যানজট ছাড়া কোন রাস্তা নেই। আর ট্রাফিক পুলিশ! তারা ডজনকে ডজন উপস্থিত থাকতেই আইন ভঙ্গ করার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয় তাতে ট্রাফিক পুলিশ না থাকলে কি হতো?