দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিষণ্নতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এ কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক জরিপ এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক করা জরিপে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন। সবচেয়ে আতংকর বিষয় হলো বিষণ্ণতায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আর এই কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করে। আবার শিশুদের মধ্যে এক শতাংশই আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভয়ংকার এই ঝুঁকি কমাতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা বলেছেন মনোরোগ বিজ্ঞানীরা।
মনোরোগ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা যাবে না। সর্বোপরি ‘ব্রোকেন ফ্যামিলি’র সন্তানদের দিকে রাষ্ট্র এবং সমাজের বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপ এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। খবর সংবাদ মাধ্যম সূত্রের।
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামালের বক্তব্য উদ্বৃত করে ওই খবরে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের এক ভাগ শিশু (যাদের বয়স ১৭ বছরের মধ্যে) বিষণ্নতায় ভুগে থাকে। এদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। অথচ আত্মহত্যা করা যে অপরাধ; সেটি ধর্মে এবং আইনেও বলা আছে।’ ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘যারা আত্মহত্যা করে, কি কারণে বা কেনো করেছে- সে বিষয়গুলো শনাক্ত করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব আত্মহত্যার ক্ষত হতেই সমাজকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষা নিতে হবে পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল আরও বলেন, ‘আত্মহত্যা যারা করে তারা একঅর্থে ‘খুনি’। জীবনকে হত্যা করে তারা অপরাধ করছে। তাদের প্রতি কখনও অনুকম্পা দেখানো উচিত নয়। আবার তাদের ঘটনা বিস্তারিত মিডিয়ায় প্রকাশ করাও উচিত না। এর কারণ হলো, যারা বিষণ্নতায় ভুগছে- তাদের উপর এর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মা-বাবার অপরাধ, দুঃখ-কষ্ট ভুলে সন্তানদের সুুশিক্ষিত হওয়ার পথ বেছে নেওয়া উচিত। কোন পরিবারে মা-বাবার মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটলে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের ওই সকল পরিবারের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের সামাজিক গঠন এবং মূল্যবোধে পরিবর্তন আসছে। পারিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ কম হচ্ছে। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও বিচ্ছেদ বা পৃথক থাকার প্রবণতা বেড়েছে। সবমিলিয়ে সামাজিক বন্ধনজনিত যে আশ্রয় ছিল সমাজের মধ্যে তা ক্রমেই ভেঙ্গে পড়ছে। আর তাই যেকোনো বয়সের মানুষ যখন পরিবার কিংবা সমাজের আশ্রয়ের অভাব বোধ করে ও নিজের অনুভূতি প্রকাশ কিংবা চাহিদা জানানোর উপায় হারিয়ে ফেলে, তখন সে বিষণ্ন হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
এসব বিষয়গুলো সমাজের মানুষগুলোকে বুঝতে হবে। তানাহলে সমাজে বিষণ্ণ মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়বে, সেইসঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণাও ক্রমেই বাড়তেই থাকবে।