ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই কোন বিদেশী কূটনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের গুলিতে সৌদি দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা খালাফ আল আলী (৪৫) নামে নিহত হয়েছেন। ৫ মার্চ গভীর রাতে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টার দিকে তাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, খালাফ সৌদি দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কী কারণে ওই বিদেশী নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অন্যদিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে বিদেশী নাগরিকের খুন হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দা ও অন্য দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। গুলশান এলাকায় প্রবেশের প্রতিটি পয়েন্টে রাতে একাধিক চেকপোস্ট থাকার পরও এমন হত্যাকাণ্ডে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সৌদি নাগরিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা হতে পারে না। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সরকারকে বিপাকে ফেলতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে। হত্যাকারীরা ওই বিদেশীকে হত্যার পর গুলশান এলাকায়ই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে।
সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খুন হওয়ার খবর পেয়ে ৬ মার্চ সকালে পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, এসবি ও ডিজিএফআই কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল গুলশানের ১২০ ও ১১৭ নম্বর সড়কের সংযোগ মোড়ের ১৯/বি নম্বর বাড়িতে অবস্থিত কনস্যুলেট অব পর্তুগাল ভবনের কাছে ছুটে যান। ওই বাড়ির দেয়ালের পাশে মাটির স্তূপের ওপর থেকে ৫ মার্চ রাত ২টার দিকে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
সৌদি দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এম আল্লামা সিদ্দিক এবং চিফ অব প্রটোকল এমএএস সাদিক দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান।
সৌদি দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খালাফ আল আলী গুলশান দুই নম্বর সেকশনের ১২০ নম্বর সড়কের ২২/এ বাড়ির চতুর্থ তলার ৪/এ ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম জানান, খালাফ প্রায় দুই বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে একাকি বসবাস করে আসছেন। তিনি প্রায় প্রতিরাতেই সাইকেলে কিংবা হেঁটে জগিং (ব্যায়াম) করতে বের হতেন। প্রতিদিনের মতো ৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এ সময় শরীরে গেঞ্জি, ট্রাউজার ও পায়ে কেডস পরা ছিল। ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী তাপস রেমা জানান, ৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালাফ বাসা থেকে বের হন। তিনি বলেন, খালাফ প্রায় সময়ই নৈশভ্রমণে বের হতেন। আবার রাতেই ফিরে আসতেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল মাত্র ২০ গজ দূরে হলেও তিনি কোন গুলির শব্দ শোনেননি।
এ হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বাংলাদেশ ও সৌদির মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিহত কর্মকর্তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৪৫ বছর বয়সী খালাফ আল আলী সৌদি দূতাবাসে কনস্যুলার বিভাগে কাজ করতেন।
এদিকে গুলশানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বিদেশী নাগরিককে হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, রাতের বেলায় গুলশানে প্রবেশ করতে হলে প্রায় সব গাড়ি ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়। রাত ৯টার পর রিকশা প্রবেশ নিষেধ। সেখানে এত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এমন হত্যকাণ্ড নিয়ে এলাকাবাসী তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। সৌদি নাগরিক খালাফের হত্যাকাণ্ডে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান। তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর।