দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে নাফাখুমের পানিতে তারা কী যেনো একটা খুজঁছিলো আর কুড়িয়ে তা আবার ব্যাগে ভরছিলো। ঠিক তাই তিন তরুণ যেনো নাফাখুমের বর্জ অপসারণের কাজ করছেন।
সত্যিই এক অবাক করা কাণ্ড। কারণ তাদের ওই কারবার দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক। এই এতো সুন্দর পরিবেশ থেকে বর্জ বের হচ্ছে। মানুষের অসচেতনার কারণে এমন সুন্দর একটি পরিবেশ কিভাবে দুষিত হচ্ছে তা নিজে চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। এই যুবকদের কাহিনী একটি সহযোগী পত্রিকায় এলে আমাদেরও মনে হয় বিষয়টি নিয়ে একটু নাড়া-ঘাটা করা দরকার। কারণ আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে থাকার এটিও একটি কারণ। আমাদের মধ্যে সচেতনার বড়ই অভাব।
এই তরুণরা আসলে কে? সত্যিই মানুষ হিসেবে এঁরা অসাধারণ তা এক কথায় বলা যায়। তৌফিক, বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইরাজ ও মাঝে জ্যাকেট পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মামুন।
সেই তিন গর্বিত তরুণ তৌফিক, ইরাজ ও মামুনের (নিল, কালো ও সবুজ জ্যাকেট) সঙ্গে তথ্যপ্রদানকারী সংবাদকর্মীকে দেখা যাচ্ছে
দেশের জন্য যাদের দরদ আছে এবং এমন অবস্থায় উদ্বেগ দেখে অপরাধবোধে আক্রান্ত হতে হয়। তারা বেড়াতে এসে দেখলেন এমন সুন্দর একটি পরিবেশে বর্জ্য যেনো এক অন্তরায়। তাই স্বউদ্যোগে বর্জ্য অপসারণের কাজ করলেন। সত্যিই প্রকৃত নাগরিকের পরিচয় দিয়েছেন তারা।
নাফাখুমের পানিতে তারা কী যেন খুজঁছিল ও ব্যাগে রাখছিল। এমন দৃশ্য দেখে যে কারও মনে সন্দেহের উগ্রেক হতেই পারে। এই খরস্রোতা পানিতে গোল্ডবার আছে নাকি? নাকি পার্ল পাওয়া সম্ভব? যে কেও ধারণা করতে পারেন এখানে বড় জোড় কাঁকড়া বা শার্প স্টোনের দেখা মিলতে পারে। কিন্তু পরে জানা গেলো বর্জ্য অপসারণের কাহিনী।
তারা বিমর্ষ মুখে ব্যাগের চেইনটা খুলে দেখালেন। তাদের ব্যাগ ভর্তি ম্যাগি, ক্যান্ডি, ক্যাডবেরি, বোম্বে চিপস, ক্রিসপি, ওয়েফার চকলেটের ফেলে দেওয়া প্যাকেট; মাম, ফ্রেশ, স্পিড, টাইগারের বোতলও রয়েছে! এই অপচনশীল সব কিছু তারা সাধ্যমত তুলে এনেছেন কেবলমাত্র ডাস্টবিনে ফেলার জন্য। রীতিমতো টোকাইয়ের কাজ করেছেন এই শিক্ষিত যুবকরা। এই সব বর্জ্যগুলো তারা তুলে এসে ডাস্টবিনে ফেলছেন!
ধারণাটা কিভাবে এলো সে প্রশ্নে তৌফিক বলেছেন, মনে করেন ভাই আপনি সেন্টমাটিন্সের নীল পানি দেখে বিস্মিত, আনন্দে হাঁটু পর্যন্ত নেমেছেন, কিন্তু হঠাৎ পায়ে একটা পলিথিন বাঁধল, তখন আপনার কেমন নোংরা লাগবে?
আমাদের পযর্টন শিল্পের প্রতিটি অনুষঙ্গের ওপর এই স্বপ্নবান যুবকদের এতো দরদ, ভালোবাসা ও অগাধ বিশ্লেষণ ক্ষমতা খুব কম মানুষের মধ্যেই রয়েছে। আদিবাসী হতে শুরু করে সাপ, কাঁকড়া, লতা বা ছোট একটা গাছের প্রতি তাদের বহু দরদ! ওদের কথা না শুনলে হয়তো আপনিও অজ্ঞই রয়ে যাবেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করলে হয়তো আমরা একদিন সভ্য জাতিতে পরিণত হবো।
অনেক সময় দেখা যায় একটা সিগারেট খেয়ে তার আগুনটাও সচেতনভাবে আমরা নিভাই না, মোথাটা ফেলি দেয় যত্রতত্র। এতে পরিবেশের কি ক্ষতি হতে পারে বা আশেপাশে দাহ্য পদার্থ থাকলে বড় কোনো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে, তা আমাদের মাথায় থাকে না। আমরা অনেক সময় পানি বা কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়ে ছুঁড়ে মারি বোতলটি। এমন ঘটনা আমরা রাজধানীতে বসে হর হামেশায় দেখতে পায়।
এই তিন যুবকের এমন দেশ সেবা দেখে ১০০ জনের ১ জনও যদি সজাগ হয়, তাহলে ওরা যেমন সফল তেমনি আমরা জাতি হিসেবেও নিজেদের গর্বিত মনে করবো। আগামী প্রজন্মকে আমরা এভাবে ভালো কাজগুলো করার জন্য উৎসাহিত করবো।