The Dhaka Times Desk লাশ নিয়ে বাণিজ্য। এমন কথাটি শুনতে খারাপ লাগলেও গতকাল এমনই ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর খ্যাতিমান হাসপাতালে। চিকিৎসা বিল দিতে পারছেন না বলে স্বজনদের ২ দিন ধরে লাশ দিচ্ছিল না ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে টিভি চ্যানেলগুলোতে ব্যাপক প্রচারের পর ৫ মাসে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে লাশ ফেরত দিয়েছে তারা।
৫ মাসে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে রাজধানীর গুলশানের বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মো: আসলামের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। লিখিতভাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় মরদেহ বুঝে নেন স্বজনেরা। এর আগে সকাল থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লাশ আটকে রাখার খবর প্রচার হতে থাকে। রিপোর্টার্স ইউনিটিতে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কেও যদি টাকা দিতে না পারে, তাহলে তার লাশ আটকে রাখতে হবে এমন অমানবিক ঘটনা হতে পারে না। তিনি এজন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের কঠোর সমালোচনাও করেন।
জানা যায়, রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা মো: আসলামকে গত ৩ জুলাই ফুসফুসে সমস্যাজনিত কারণে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মো: আসলাম। তার চিকিৎসা খরচ বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে প্রায় ৩১ লাখ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেন। প্রাথমিকভাবে স্বজনেরা প্রায় ১২ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরে পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা ছাড়া মরদেহ দেবে না বলে স্বজনদের সাফ জানিয়ে দেয়। এমন এক অবস্থায় আসলামের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এ বিষয়টি নিয়ে গতকাল রবিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রচারিত হয়।
সংবাদ প্রচারের পর গতকাল ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসলামের স্বজনদের সঙ্গে বৈঠকে বসে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসলামের পরিবারকে আগামী ৫ মাসে ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে- এইমর্মে স্ট্যাম্পে এ প্রতিশ্রুতি লিখে সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আসলামের স্বজনেরা স্বাক্ষর করেন। এরপর সন্ধ্যায় স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। লাশ হস্তান্তরের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিস্তিার নগদ ৪০ হাজার টাকা দেন আসলামের স্বজনেরা।
এদিকে ১২ লাখের পর বাকি ১৯ লাখ টাকার মধ্যে মানবিক বিবেচনায় ৪ লাখ টাকা ছাড় দিয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে বলে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে আসলামের মেয়ে সাদিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তাঁরা মরদেহ বুঝে পেয়েছেন। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর জানাজা এবং দাফনের সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন তাঁরা। এ মুহূর্তে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আর্থিক সহায়তার আকুল আবেদনও জানিয়েছেন মৃত আসলামের মেয়ে সাদিয়া।
এদিকে গতকাল দিনভর বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হাসপাতালের লাশ আটকে রাখার এমন খবর সকলের মনেই নাড়া দেয়। এতো বড় একটি হাসপাতাল যারা নিজেদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করেন, তারা অমানবিকভাবে লাশ আটকে রেখে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের যেভাবে কষ্ট দিয়েছেন তা সভ্য সমাজে হতে পারে না। যে কাজটি তারা পরে করলেন, সেটি তারা আগেই করতে পারতেন। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা। আর আমাদের দেশে বিশেষ করে রাজধানীতে বড় বড় হাসপাতালগুলো কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে। তাদের কাছে এমন অমানবিক ঘটনা কেনো ঘটবে সেটিই সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা।