আগামী বৃহস্পতিবার কার্ডিফে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা। গতকালের খেলায় এর আগের দুবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে তারা। অন্যদিকে অ্যাশেজ শুরুর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার এমন ভরাডুবি তাদের প্রচন্ড সমালোচনার মুখে ফেলবে এটা নিশ্চিত। মূলত মাহেলা জয়াবর্ধনে’র কাছেই ম্যাচ হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ইংল্যাণ্ডের বিপক্ষে ৪৮ রানের পরাজয় এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ টাই হওয়াতে আজ জয়ের কোন বিকল্প ছিলোনা অসিদের। অন্যদিকে নিউজিল্যাণ্ডকে টপকে সেমিতে যেতে লঙ্কানদের জন্যেও জয় ছিলো অত্যাবশ্যক।
টসে জিতে বোলিং নেয় অস্ট্রেলিয়া, আর মিচেল জনসনের করা ম্যাচের প্রথম শর্ট বলেই চার মারেন পেরেরা। এরপরের বলেও লেগ বাই থেকে চার আদায় করে নেন পেরেরা। কিন্তু তৃতীয় বলেই পেরেরাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন জনসন। দলীয় ২০ রানের মাথায় ইংল্যাণ্ডের সাথে সেঞ্চুরি করা সাঙ্গাকারাকে তুলে নেন ম্যাকে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭২ রান তুলে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন থিরিমান্নে-দিলশান।
৫৮ বলে ৩৪ রান করে ডোহার্টি’র বলে ওয়াটসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন দিলশান। ক্রিজে আসেন মাহেলা। ১২৮ রানের মাথায় জনসনের বলে থিরিমান্নে আউট হয়ে যান ৫৭ রান তুলে। ১৫৯ রানে দলীয় পঞ্চম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ২০ বলে ১২ রান করে ফল্কনারের বলে বোল্ড হন অধিনায়ক ম্যাথিউস।
তবে অপরপ্রান্তে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে চাণ্ডিমাল-মাহেলা দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ৬৫ রান যোগ করেন। ৩২ বলে ৩১ করে চাণ্ডিমাল আউট হলে রানের ভার একা কাঁধে তুলে নেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। বেশ কয়েকদিন রান খরায় ভুগে এ ম্যাচে তিনি অপরাজিত থাকেন ৮১ বলে ৮৪ করে, ৮ উইকেট হারিয়ে লঙ্কাকে এনে দেন ২৫৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। সেই সাথে ওয়ানডে ইতিহাসে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছেন ১১ হাজার রান।
জনসনের ৩ উইকেট ছাড়াও ম্যাকে, ফল্কনার এবং ডোহার্টি ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারে এরাঙ্গার প্রথম বলে ৪ মারেন ওয়াটসন এবং শেষ ওভারে ৪ মারেন হিউজস, সাথে বাড়তি আরও একটি রান দৌড়ে নেন ওয়াটসন। প্রথম ওভারে ৯ রান তুলে ভালো শুরু ইঙ্গিত দিয়েছিলো অসিরা। তবে দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে কুলাসেকারার বলে ওয়াটসন বোল্ড হলে মোহভাঙে তাদের। ৪৫ রানের মাথায় আরেক ওপেনার হিউজসকেও তুলে নেন কুলাসেকারা।
২০ বলে ৩২ রান করে বিপদজনক হয়ে ওঠার আগেই দলীয় ৫৯ রানের মাথায় ম্যাক্সওয়েল ফিরে যান মালিঙ্গার বলে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। এক পর্যায়ে ৮০ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে বসে তারা। তবে ষষ্ঠ উইকেটে এডাম ভগস এবং ম্যাথু ওয়েড ৪৭ রানের জুটি তুলে কিছুতা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, কিন্তু আবারও কুলাসেকারা দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন এই জুটিটি ভেঙে। ২৩ বলে ৩১ রান করা ওয়েডকে তিনি দিলশানের ক্যাচে পরিণত করেন।
১৯২ রানে হেরাথের বলে ৪৯ রান করা ভগস আউট হয়ে গেলে, নবম উইকেট জুটিতে ম্যাকে-ডোহার্টি ৪১ রান তুলে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তবে দিলশানের বলে দিলশানের হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ম্যাকে আউট হয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়া ৪২.৩ ওভারে ২৩৩ রান তুলে পরাজয় বরণ করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
২০ রানের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার জয়ে কুলাসেকারা ৩ উইকেট, হেরাথ ২ উইকেট এবং এরাঙ্গা, মালিঙ্গা, ম্যাথিউস, দিলশান ১টি করে উইকেট নেন।
১১ হাজার রান ছোঁয়া এবং দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তুলতে সহায়তা করা মাহেলা জয়াবর্ধনে পান ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি।