দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রক্তদান একটি উত্তম মানসিকতার পরিচয়। পৃথিবীর মহৎ কাজগুলোর মধ্যে রক্তদান অন্যতম। কারণ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর চেয়ে উত্তম কাজ আর কী হতে পারে? আপনার রক্তদানের মাধ্যমেই একজন হয়ত মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে আসে। তবে এই রক্তদানের আগে এবং পরে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নইলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে।
রক্তদানের আগে যা মাথায় রাখবেনঃ
১। রক্তদানের আগে পর্যাপ্ত তরল খাবার খাবেন। কারণ তরল খাবার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে।
২। যেদিন রক্ত দিবেন তার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিবেন। ঘুমের ঘাটতি থাকলে সারাদিন শরীর ক্লান্ত মনে হবে। তাই রক্তদানের সময় শারিরীক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩। আপনার রক্ত পরীক্ষার সময় ডাক্তার বা নার্স যে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নিবে সেটি নতুন কি না লক্ষ্য করবেন।
৪। রক্ত দেওয়ার সময় টাইট পোশাক পড়বেন না। বিশেষ করে এমন পোশাক পড়বেন যেন রক্ত দেওয়ার সময় সেই পোশাকের হাতা কনুইয়ের উপর পর্যন্ত অনাসায়ে উঠানো যায়।
রক্ত দেওয়ার সময়ঃ
রক্ত দান করার সময় পাশের কারো সাথে কথা বলতে থাকুন বা গান শুনতে থাকুন। তাহলে রক্ত দেওয়ার প্রতি আপনার মনযোগ থাকবে না। ফলে রক্ত দেওয়ার সময় আপনার কোন সমস্যা মনে হবে না। মনের মধ্যে কোন দুর্বলতাকে স্থান দিবেন না। কারণ মনের মধ্যে দুর্বলতা কাজ করলেই আপনার কাছে এই উত্তম কাজটির প্রতি ভয় সৃষ্টি হয়ে যাবে যা আপনাকে পরবর্তীতে রক্তদানে নিরুৎসাহিত করবে।
রক্ত দেওয়ার পরবর্তী কাজঃ
১। পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিৎ।
২। রক্ত দেওয়া হয়ে গেলেও ৫ মিনিট বেডে শুয়ে থাকুন। তারপর উঠুন, তবে উঠার সময় যদি মাথা ঘোরা বা নিজের কাছে কোন সমস্যা অনুভব হয় তবে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন।
৩। কিছুদিন পরিশ্রমের কাজ একটু কম করার চেষ্টা করুন। এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
৪। আয়রন, ফোলাইট, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল শাখ, মাংস, মাছ, ডিম, কিশমিশ, কলা ইত্যাদি খাবার বেশি করে খাবেন। এসব খাবার আপনার রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
রক্তদানের উপকারিতাঃ
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৮০০ থেকে ১৩০০ মিলিলিটারেও বেশি অতিরিক্ত রক্ত থাকে। সেখান থেকে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করায় কোন ক্ষতি হয় না। মানুষের শরীররে রক্তের উপাদান গুলি প্রতি চার মাস পর এমনিতেই নষ্ট হয়ে নতুন রক্ত উৎপাদিত হয়।
তাই রক্ত দানে কোন ক্ষতি নেই বরং রয়েছে নানা উপকারিতা।
১। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়ঃ নিয়মত রক্তদানে আপনার শরীরের নানা ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
২। বিনা খরচে শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা করা যায়ঃ রক্ত দেওয়ার সময় শরীরের মারাত্বক কিছু রোগের (হেপাটাইটিস বি, সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া এবং এইডস এই পাঁচটি রোগের) পরীক্ষা বিনা খরচে করা যায়। ফলে শরীরে বড় ধরনের কোন রোগ বাসা বেধেছে কি না তা জানার জন্য আর অর্থ খরচ করা লাগে না।
৩।স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস পায়ঃ নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে ফলে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কারণ শরীরের অতিরিক্ত রক্ত, রক্ত সংবহনে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রক্ত দিলে সেই পরিমান স্বাভাবিক হয়ে যায়।
৪। প্রাণবন্ততা এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিঃ রক্ত দান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের ব্যোন ম্যারো নতুন কনিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্ত দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর লোহিত কনিকার ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই। আর এই প্রক্রিয়া আমাদের শরীরের সার্বিক সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা কেই বাড়িয়ে দেয়।
৫। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন, “ যে ব্যাক্তি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল সে যেন সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করল” ( সূরা মায়েদাঃ ৩২)। সুতরাং বুঝতেই পাছেন রক্তদানের সোওয়াব কেমন হতে পারে। এছাড়া রক্তদানের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।