দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোরবানি ঈদ এলেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার জন্য গরুকে কৃত্রিমভাবে নানা ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে গরুকে মোটাতাজাকরণ করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা গরু চেনার উপায় জেনে নিন।
পবিত্র ঈদুল আজহা একেবারে সন্নিকটে। এই কোরবানি ঈদের প্রধান আকর্ষণ হলো গরু বা ছাগল কোরবানি করা। কোরবানি উপলক্ষে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসেছে পশুর হাট। প্রস্তুত হয়েছে রাজধানীর পশুরহাটগুলো। দেশের বিভিন্ন স্থানে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই রাজধানীর হাটগুলোয় গবাদিপশু নিয়ে আসার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোরবানিতে প্রধান্য পায় গরু। গরু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটে থাকে বেশির ভাগ। আর তাই ঈদ এলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গো-খাদ্যের সঙ্গে মোটাতাজাকরণ সামগ্রী মিশিয়ে খাইয়ে গরুকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড় করে তোলে। তারা বাড়তি মুনাফার আশায় অল্পদিনের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করতে গো-খাদ্যের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেটও ব্যবহার করে। মাংসপেশিতে প্রয়োগ করে থাকে নিষিদ্ধ ইনজেকশন, যা গরু ও জনস্বাস্থ্য উভয়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষয়।
এই বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডাঃ হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, এবার কোরবানি দেওয়ার জন্য ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজার গবাদিপশু তৈরি। গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যদি গবাদিপশু প্রস্তুত করতে পারি তাহলে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করার প্রয়োজন পড়বে না। গো-খাদ্যে স্টেরয়েড ও রাসায়নিক মেশানো প্রতিরোধে আসন্ন ঈদে পশুর হাটগুলোতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম মনিটর করবে। তিনি আরও জানান, ঈদকে সামনে রেখে অসাধু উপায়ে কেও যাতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে স্টেরয়েড মেশাতে না পারে সেজন্য মনিটরিংয়ের পাশাপাশি আইন এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজাকরণ গরু বিভাবে চেনা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, কৃত্রিমভাবে গরুর মাংসপেশিতে ভারতীয় ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। গরুকে খাওয়ানো হয় স্টেরয়েড গ্রুপের বিভিন্ন ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেট খাওয়ালে গরুর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে শরীরে পানি জমতে শুরু করে। যার ফলে গরু মোটাতাজা দেখায়। এই গরু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারাও যেতে পারে বা এর গোশত আরও কমতে পারে। এমন গরুর গোশত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব ওষুধের ক্রিয়া তীব্র তাপেও নষ্ট হয় না। যে কারণে মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের গরুর গোশত খেলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্তও হতে পারে মানবদেহে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, স্টেরয়েড গ্রুপের ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ডেক্সামেথাসন জাতীয় ইনজেকশন দেওয়া গরু খুব শান্ত প্রকৃতির হয়। এরা ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারে না। গরুর ঊরু অনেক বেশি মাংসল দেখায়। অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরেই পানি জমে মোটা দেখায়। আঙুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে দেবে গিয়ে গর্ত দেখায়। গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখেও গরুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়। ট্যাবলেট খাওয়ানো হলে গরু দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলতে থাকে। গরুকে খুব ক্লান্ত দেখা যায় এবং সারাক্ষণ হাঁপাতে থাকে। গরুর মুখে অতিরিক্ত লালা বা ফেনা লেগে থাকাও কৃত্রিম উপায়ে গরুকে মোটা করার আরেকটি লক্ষণ বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডাঃ হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক আরও জানান যে, গত বছর মোটাতাজা করা গরুর প্রতি মানুষের ঝোঁক কম ছিল। এবার প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের নজরদারির কারণে গরু মোটাতাজাকরণ কম হয়েছে। খামারিরা অনেকেই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরু মোটাতাজা করেছেন। তিনি আরও জানান, গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে খামারি ও সাধারণ মানুষকে এবার সচেতন করা হয়েছে।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংস মানবশরীরে কি প্রভাব ফেলে?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ক্ষতিকারক ওষুধ খাওয়ানো হলে গরুর মাংস রান্নার পরও তার অবশেষ রয়েই যায়। যে কারণে ওষুধের অবশেষ অংশ মানবদেহে জমা হওয়ায় মানুষের বিপাক ক্রিয়া কমে যাবে। ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত এবং রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা বিপদসীমার কাছাকাছি, তাদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে মোটাতাজা করা গরু বয়সের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবেই মোটা হয়। এই ধরনের গরু ভালো করে হাঁটতেও পারে না, তারা ঝিমায়। এগুলোর মাংস খেলে নিজেদের স্বাস্থ্য নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। তাই এইসব কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজাকরণ গরুগুলো অবশ্যই আমাদের বর্জন করতে হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলো আমরা গরু কেনার সময় খেয়াল করতে পারি।