দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিশুরা সর্বদা অনুকরণ প্রিয়, বড়দের অনুকরণ করেই তারা ধীরে ধীরে অনেক কিছু শিখে থাকে। তবে অনেক বাবা-মায়ের অভিযোগ তাদের সন্তান তাদের কথা শোনে না, অহেতুক আবদার করে, খারাপ কাজের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। এমনকি তাদের কিছু কাজকর্ম অনেক সময় পিতা-মাতাকে অন্যদের সামনে মাথা নিচু করতে বাধ্য করে।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন এই সমস্ত দোষগুলোর জন্য ওরা নিজেরাই দায়ী? কখনই না, তাদের এই অহেতুক আবদার এবং অপ্রত্যাশিত আচরণের জন্য পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণহীন দাবি পুরণ এবং অধিক আদর সবচেয়ে বেশি দায়ী। মনে রাখবেন শিশুকাল থেকে আপনার সন্তানকে যেভাবে গড়ে তুলবেন বড় হয়েও তার উপর সেই প্রভাব বজায় থাকবে। তাই শিশুদের বাজে অভ্যাসগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। আজ আমরা জানবো কিভাবে শিশুদের বাজে অভ্যাসগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন।
১। বাচ্চাদের কাজই হচ্ছে কোন কিছু দেখলেই সেটি পেতে চাইবে। তবে আপনি তাকে বুঝতে শিখাবেন সব কিছু চাইলেই পাওয়া যায় না। আমরা অনেকেই ভাবি ছোট্ট বাচ্ছা শখ করে চাচ্ছে একটু দিই না হয়। ভুলেও এমন কাজ করবেন না। কারণ এভাবে চাইলেই পেয়ে গেলে তার অভ্যাস এমন হয়ে যাবে, যেকোন জায়গায় যেকোন জিনিস চেয়ে বসবে। তাই তার আবদারের জিনিসটির সম্পর্কে উপকারিতা এবং অপকারিতা বুঝাতে চেষ্টা করুন।
২। তাদের স্কুলে যাওয়ার সময় অল্প করে পকেটমানি দিন এবং সেই অর্থ কিভাবে খরচ করতে হবে তা শিখিয়ে দিন। তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করুন অতিরিক্ত অর্থ খরচ করার মাঝে কোন সার্থকতা নেই। বরং হিসাব করে অর্থ খরচ করার মাঝেই সার্থকতা লুকিয়ে রয়েছে। এর ফলে সে শিখবে, সীমিত অর্থ দিয়ে কিভাবে তার সর্বাধিক চাহিদা পুরণ করতে হয়।
৩। বড়দের কিভাবে সম্মান করতে হয় এবং তার থেকে ছোটদের কিভাবে স্নেহ করতে হয় সেই বিষয়গুলো বাচ্চাদের ভাল করে বুঝিয়ে বলুন। তবে এই অভ্যাসগুলো তাদেরকে শিখাতে হলে তাদের সামনেই আপনাকেও বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করতে হবে। প্রথমেই বলেছি বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়, তাই আপনার দেখা দেখে তারাও এক সময় এই অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করে নিবে।
৪। আপনার আত্মীয় বা প্রতিবেশিদের বুঝিয়ে বলুন, বাচ্চাদের সামনে যেন এমন কোন বাজে আচরণ বা এমন কোন বাজে কথা না বলে যা বাচ্চারা শিখে নেয়। তাদেরকে সর্বদা ভাল কিছু শিক্ষা দিতে পরামর্শ দিন।
৫। বাচ্চাদের সাথে করেই অন্যকে করুন বা বাচ্চাদের কে দিয়েই দান বা সাহায্য করাতে উৎসাহী করুন। নিজের অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্যদের দিয়ে দেওয়া এবং তাদের দুঃখ দুর্দশায় সাহায্য করার মনোভাব সৃষ্টি করতে আগ্রহী করে তুলুন। তার মধ্যে অন্যের দুঃখ উপলব্ধি করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে শিখান। যে শিশু ছোট থেকেই অন্যের দুঃখ উপলব্ধি করতে পারে তার দ্বারা অন্যায় কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ তার কোন একটি অন্যায় কাজের জন্য অন্যরা কতটুকু কষ্ট পাবে তা সে আগেই বুঝতে পারে।
৬। সন্তানকে আপনার জীবনের গল্প বলুন। কিভাবে আপনি বর্তমান অবস্থায় পৌছেছেন এবং আপনার জীবনের উত্থান-পতনের গল্প শুনাতে পারেন। এর দ্বারা বাস্তব জীবন কতটা কঠিন তারা শৈশব থেকেই উপলব্ধি করতে পারবে। এর ফলে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং কিভাবে ভাল কাজ করে জীবনে উন্নয়ন করা যায় সেই বিষয়ে ভাবতে সাহায্য করবে।
৭। তাকে বুঝতে শিখান তার কোন দাবি আপনি পুরণ করতে পারবেন এবং কোন দাবি পুরণ করতে পারবেন না। আপনার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে এবং তার চাহিদাকৃত বস্তুর সঠিক উপযোগিতা কতটুকু সেই বিষয়ে বুঝতে শিখান।
৮। সন্তানদের শিক্ষা দিন, সম্মান ক্রয় করা বা কুড়িয়ে পাওয়া যায় না সেটা অর্জন করতে হয়। কিভাবে সম্মান অর্জন করতে হয় এবং কি করলে সেই সম্মান নষ্ট হয়ে যায় সেই বিষয়েও সঠিক ধারণা দিন।
আপনার সন্তানকে যদি এই গুনগুলো শিক্ষা দিতে পারেন তাহলে তার দ্বারা আপনার সম্মান আরো বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সন্তান কখনই খারাপ কাজে নিজেকে জড়াবে না। যেহেতু আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব আপনার, সেহেতু এখন থেকেই উপরোক্ত বিষয়ে আপনার সন্তানকে দীক্ষিত করে তুলুন।