দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক বাংলাদেশী মেয়েকে দত্তক নিয়ে বিতর্কীত হয়েছিলেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ার ৬ বারের নির্বাচিত গভর্নর জন ম্যাককেইন! তবে কেনো এই বিতর্ক?
সদ্য প্রয়াত আমেরিকার ভার্জিনিয়ার ৬ বারের নির্বাচিত গভর্নর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী সিন্ডি ম্যাককেইন যে মেয়েটিকে বাংলাদেশ হতে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেই মেয়েটির নাম ব্রিজেট ম্যাককেইন।
১৯৯১ সালে ম্যাককেইন পত্নী ব্রিজেটকে নিয়ে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। তাদের প্রথম দেখা হয় কোথায় সে সম্পর্কে জানান তখনকার ম্যাককেইনের এইড হিসেবে কর্মরত ওয়েস গুলেট।
ব্রিজেটের সঙ্গে সিন্ডির প্রথম দেখা হয় ঢাকার মাদারা তেরেসা পরিচালিত একটি অনাথ আশ্রমে। ওই অনাথ আশ্রমটিতে তখন ১৬০টির মতো বাচ্চা ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল ছোট একটি মেয়ে শিশু যে কিনা জন্মের সময়ই শারীরিকভাবে অক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্ম হতেই ব্রিজেটের ঠোট ও তালু কাটা ছিল। যে কারণে তাকে খাওয়াতেও খুব সমস্যা হতো। হার্টের সমস্যা থাকা আরেকটি মেয়েকেও চোখে পড়েছিল সিন্ডি ও ওয়েস গুলেটের।
এই দুটি মেয়েই শারীরিকভাবে এতোটাই নাজুক ছিল যে, চিকিৎসক না দেখালে তারা হয়তো বাঁচতো না। নিরীহ এই বাচ্চা দুটিকে দেখে আর কালবিলম্ব করলেন না ম্যাককেইন এর পত্নী। তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলেন ওই বাচ্চা দুটিকে।
সেই অনুযায়ী ভিসার জন্যও আবেদন করা হলো। তবে তৎকালীন আমেরিকান অ্যাম্বেসির কর্মকর্তারা ভিসা দিতে সমস্যা করছিল বলে বেঁকে বসলেন সিন্ডি ম্যাককেইন নিজেই।
তিনি ভিসা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ চালিয়েই যেতে থাকলেন। সিন্ডি ম্যাককেইনের সঙ্গে কথায় পেরে উঠতে না পেরে ব্রিজেটসহ অন্য একটি মেয়ের ভিসা দিয়ে দিলেন তারা। সিন্ডি পরে বলেছিলেন, আমি জানি না আমার এতোটা সাহস কোথা থেকে এলো।
ব্রিজেটকে অ্যারিজোনা বিমানবন্দরে প্রথম দেখেছিলেন জন ম্যাককেইন। নিজ স্ত্রীকে তখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, মেয়েটি কোথায় যাচ্ছে? জবাবে সিন্ডি বলেন, আমাদের বাড়িতে যাচ্ছে।
জন ম্যাককেইনের চেহারা তখন পিতৃত্বসুলভ আবেগে আপ্লুত হয়ে যায় বলে তিনি জানান, ওয়েস গুলেট। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া আরেকটি মেয়েশিশুকে দত্তক নেন ওয়েস গুলেট ও তার স্ত্রী ডেবোরাহ। মেয়েটির নাম তারা রাখেন নিক্কি।
ব্রিজেটকে নিয়ে বেশ বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়েছিল জন ম্যাককেইনকে। তখন ২০০০ সালের কথা, জন ম্যাককেইন তখন রিপাবলিক পার্টি হতে প্রেসিডেন্ট পদে জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন।
সেই সময় নিউ হ্যাম্পশায়ারের এক নির্বাচনী জনসভায় ব্রিজেটকে নিয়ে গেলে সেখানে জয়লাভ করে ম্যাককেইন। তবে বুশপন্থীরা পরবর্তীতে সাউথ ক্যারোলিনাতে ফোন করে করা এক জরিপে ভোটারদের এই প্রশ্ন করেন যে, আপনি কি জন ম্যাককেইনকে ভোট দেবেন যদি জেনে থাকেন যে তার একটি অবৈধ কৃষ্ণাঙ্গ সন্তান রয়েছে?
এই প্রশ্নে কৃষ্ণাঙ্গ সন্তান বলতে ব্রিজেটকে ইঙ্গিত করা হয় সেই সময়। সাউথ ক্যারোলিনার সেই অবশেষে নির্বাচনে হেরে যান ম্যাককেইন। এই হারের ধারাবাহিকতায়ই ও প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীর দৌড়ে হারাতে পারেননি বুশকে। সেই বাংলাদেশী মেয়েটি এখন অনেক বড়।