দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বার বার ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বিএসএফের গুলিতে গরু ব্যবসায়ীদের জীবন যাচ্ছে তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সীমান্তপথে আনা হচ্ছে গরু!
পুরো সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া। তাতেও চোরাচালান বন্ধ হয়নি। বিএসএফের গুলি, রাবার বুলেট ও পিটুনি উপেক্ষা করে অনেকেই পাচার করে আনছে গরু। কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে কৌশলে বাঁশের মাচায় তুলে দেশে পার করে আনা হচ্ছে ভারতীয় গরু। যেভাবেই হোক পাচার করে আনার পর করিডোর ফি দিয়ে ‘বৈধ’ করা হয়! এ সুযোগে মাদক চোরাচালানীরাও বেপরোয়া। পাচার করে আনছে ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা বিজিবির আওতাভুক্ত মোট ৮৩ কিলোমিটার সীমান্তে ১৭টি বিওপি রয়েছে। এক বিওপি থেকে অপর বিওপির দূরত্ব ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার। সেইসঙ্গে সীমান্তে যোগাযোগ কাঁচারাস্তা নির্ভর। রয়েছে যানবাহন সঙ্কট, লোকবলের অভাব। উপরন্তু স্থানীয় জনগণের সহযোগিতার অভাবে অভিযান পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার জনগণের সচেতনতা বাড়াতে বিজিবি প্রতি মাসে অন্তত ১৫টি সভা-সমাবেশ করে আসছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বিজিবি।
স্থানীয়রা জানান, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গেদে এলাকার মাদক কারবারীরা ট্রেনে ফেনসিডিল নিয়ে আসে। এরপর তা গেদে ও আশপাশের গ্রামগুলোতে মজুদ করে। রাত ১টায় বিএসএফ সীমান্তে সার্চ লাইটগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর আলোচিত স্থানীয় কলাবাগানের ভিতরে দুই দেশের মাদক কারবারীদের হাট বসে। রাত বাড়ার সাথে সাথে কারবার জমে ওঠে। যেখানে বিএসএফ সদস্যরা সরাসরি সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদেশের কারবারীরা মাদক চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে নিয়ে আসে এবং পরে ট্রেন, দূরপাল্লার বাস, মালবাহী ট্রাক, কোন কোন ক্ষেত্রে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারযোগে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়।
জীবননগর উপজেলার বেনীপুর, মেদিনীপুর ও হরিহরনগর সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে গরু আনতে যাওয়া মানুষ প্রতিনিয়ত ওইসব সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন। গত এক মাসের মধ্যে অন্তত এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে। বিএসএফ গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারপরও থেমে নেই অবৈধ গরু চোরাচালান। উপজেলার মেদিনীপুর সীমান্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কয়েকজন চোরাচালানী কাঁটাতারের ওপর দিয়ে গরু পার করছেন (ছবি দেখে বোঝা যায়)।
কবে শেষ হবে এমন নির্মম পেশা? দেশে কত রকমের ব্যবসা থাকতে কেনোইবা এমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে গরু ও চোরাইমাল এদেশে আনা হচ্ছে? হয়তো কেওই এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন না। কিন্তু এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কতদিন চলবে অবৈধ এসব ব্যবসা?
সীমান্তে যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন তাদের প্রধান কাজ কোন প্রকারেই যেনো সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবার না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। তানাহলে এদেশের সাধারণ মানুষ একের পর এক বিএসএফের হাতে প্রাণ দিতে থাকবে। এটি কারো কাছেই কাম্য নয়।
ছবি ও তথ্য: দৈনিক ইত্তেফাক