দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এখন অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কি হতে চলেছে সৌদি যুবরাজ সালমানের পরিণতি? বিশেষ করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র দেওয়া বক্তব্যের পর এই প্রশ্ন দানা বেঁধেছে।
এই বিষয়টি নিয়ে বিবিসি বাংলায় একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ মনে করে যে, ‘সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন’ – এমন খবর প্রকাশের পর অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী হতে চলেছে সৌদি যুবরাজ সালমানের পরিণতি?
এদিকে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, সিআইএ তাদের হাতে থাকা তথ্য উপাত্তগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে এই ধারণায় উপনীত হয়েছে বলে একটি সূত্র তাদের নিশ্চিত করেছে।
অবশ্য এসব প্রমাণাদি যে শতভাগ নিশ্চিত তা কেও বলতে পারছেন না। ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টের পর মার্কিন কর্মকর্তারা এখন বলছেন এই ব্যাপারে বহু প্রশ্নেরই উত্তর এখনও অজানা। সৌদি আরব নিজেরাও এই ঘটনার তদন্ত করছে।
বিবিসির বিশ্লেষক ফ্রাংক গার্ডনার বলেছেন, তদন্তের ফল যাই হোক না কেনো, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সুনামের ওপর ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পড়েছে।
যে কারণে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যাকে অনেকেই বর্ণনা করেন এমবিএস বলে, তার পরিণতি আসলে শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে?
তবে আগে দেখা দরকার যে জামাল খাসোগজি খুনের ঘটনা কিভাবে সৌদি আরবের ভেতরে যুবরাজের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেটি।
তরুণদের আশার প্রতীক ছিলেন যুবরাজ
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বয়স মাত্র ৩৩ বছর। তাকে দেখা হয় লক্ষ লক্ষ তরুণ সৌদির ভবিষ্যতের আশার প্রতীক হিসেবেই। মনে করা হয় যে তিনি প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও সার্বিক প্রগতির মাধ্যমে সৌদি আরবকে একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে দিতে চলেছেন।
খাশোগি খুনের ঘটনার পর যুবরাজ মোহাম্মদেন সেই অবস্থান কী এখন থাকবে?
এই সেদিনও পশ্চিমা দেশগুলোর নেতা হতে শুরু করে হলিউড পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে প্রসংশিত হচ্ছিলেন প্রিন্স মোহাম্মদ, তবে এখন অনেকেই গভীরভাবে সন্দেহ করছেন যে, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে হয়তো তারই হাত ছিল।
যে কারণে সৌদি আরবের নেতৃত্ব ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর সবচাইতে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
কূটনৈতিক সংকট
সৌদি আরব সরকার এখন ইয়েমেনের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। এতেকরে দেশটিতে প্রাণহানি হয়েছে ব্যাপক, দেখা দিয়েছে গুরুতর মানবিক সংকটও।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের পরাভূত করার জন্য সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র ও কিছুটা যুক্তরাজ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলো।
প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গে বৈরিতার অবসান ঘটানোর জন্যও সৌদি আরবের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে। কাতারে রয়েছে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের এক বিশাল ঘাঁটি– যা এই অঞ্চলে মার্কিন কৌশলগত স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত। এই ঘাঁটিতে অন্তত ১৭টি দেশের লোক কাজ করে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় কাতার-সৌদি বৈরিতার দ্রুত অবসান হোক।
কি হতে পারে এমবিএসের ভবিষ্যত?
বিবিসির বিশ্লেষক ফ্রাংক গার্ডনার বলেছেন, সৌদি সরকার হয়তো বিষয়টি কখনও প্রকাশ্যে স্বীকার করবে না। তবে এটা খুবই সম্ভব যে কোনোভাবেই হোক তার ডানা কেটে দেওয়া হবে, অর্থৎ তার ক্ষমতা এবং প্রভাব অন্তত কিছুটা হলেও খর্ব করা হবে।
তার বর্তমান পদে কী তিনি থাকবেন?
২০১৭ সালের জুন মাসে মোহাম্মদ বিন সালমান ‘যুবরাজ’ অর্থাৎ বর্তমান বাদশার উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বিবিসির ফ্রাংক গার্ডনার বলেছেন, তাকে যদি তার পদ হতে একেবারেই সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেটা হবে খুবই নাটকীয় এবং বিস্ময়কর ব্যাপার।
বরং মনে করা হচ্ছে যে, তার উপাধি এবং মর্যাদা হয়তো অপরিবর্তিতই থেকে যাবে। কারণ তিনি এখনও তার পিতা বাদশা সালমানের অত্যন্ত প্রিয় পুত্র।
তবে এমন হতে পারে যে, তার হাতে থাকা কিছু ক্ষমতা হয়তো চুপিসারেই অন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। যে কারণে অনেকটা আগের মতোই ক্ষমতার ভাগাভাগির ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এতে হয়তো দেশটিতে একটা স্থিতিশীলতাও আসতে পারে।
হয়তো এর ফলে যুবরাজ সালমানের শত্রু-সমালোচকের সংখ্যাও কমে আসবে। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এমন আরও অনেক সৌদিদের নিয়ে আসা হবে। কারণ হলো, গত বছর জুন মাস হতে সৌদি আরবে কার্যত এক ব্যক্তির শাসন বিদ্যমান।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট কতোটা নির্ভরযোগ্য?
মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে রিপোর্ট বেরোয় যে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই আসলে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন বলে সিআইএ বিশ্বাস করে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ যে সরাসরি সৌদি যুবরাজের কাছ থেকেই এসেছে, সেটি সিআইএ ধারণা করছে মূলত একটি ফোন কলের ভিত্তিতে।
এদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাই প্রিন্স খালেদ বিন সালমান যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত, তিনিই নাকি জামাল খাশোগিকে ফোন করেছিলেন।
যুবরাজের নির্দেশেই তিনি নাকি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ফোন করে আশ্বাস দেন যে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে তিনি যেতে পারেন, তার কোনো রকম বিপদ হবে না।
সিআইএ’র ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে যে, তারা এসব প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা যে, এমন একটি হত্যাকাণ্ড কেবলমাত্র যুবরাজের অনুমতি নিয়েই হওয়া সম্ভব।
বিবিসির ফ্রাংক গার্ডনার আরও বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের দিনে ঘাতক দলটি যুবরাজ সালমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে ফোন করেছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তিনি বলেছেন, এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুতর ও যদিও এতেও একেবারে নির্ভুলভাবে কিছুই প্রমাণ হয় না।
তবে রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালেদ বিন সালমান দাবি করেছেন যে, জামাল খাশোগির সঙ্গে এক বছর ধরে তার কোনো রকম যোগাযোগই নেই।
কিন্তু সৌদি আরব তার এমন দাবিকে মিথ্যা বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, যুবরাজ এই হত্যা পরিকল্পনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না।
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট বলেছেন, মার্কিন সরকার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে যেসব খবর প্রকাশ পাচ্ছে -মূলত সেগুলো নির্ভুল নয়।
হিদার নোয়ার্ট বলেছেন, হোয়াইট হাউস এই ঘটনার ব্যাপারে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা ও ‘প্রাসঙ্গিক তথ্য’ বের করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে সিআইএ’র শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।