দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাতীয় সংসদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনসভায় হিরো আলমের মতো একজন মানুষকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। টিভি চ্যানেলগুলোতেও সরাসরি আনা হচ্ছে হিরো আলমকে!
ইউটিউব চ্যানেলে বিচিত্র অভিনয়, গান ও নাচ দেখিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনায় আসা হিরো আলমের মনোনয়ন কেনার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনার ঝড় বইছে।
নিজেকে অভিনেতা ও মডেল হিসেবে পরিচয় দেওয়া বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই হিরো আলম ওরফে আশরাফুল আলম সম্প্রতি জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয় হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৪ আসন হতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন হিরো আলম।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানার সঙ্গে মনোনয়ন ফরম হাতে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
আবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে হিরো আলমের সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে।
এদিকে হিরো আলমের এই মনোনয়ন সংগ্রহের পর সংবাদ মাধ্যমগুলোও বেশ নড়ে চড়ে বসেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতেও হিরো আলমকে সরাসরি টক শোতে আনা হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাকে নানাভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি কেনো এই মনোনয়ন নিয়ে এলেন। তিনি তো রাজনীতি করেন না। তার গ্রহণযোগ্যতা কতোটুকু সেইসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন হিরো আলম।
হিরো আলম বলেছেন, আমি দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে যে কোনো ভোটেই তো দাঁড়াতে পারি। সংসদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেখানে আইন পাস হয় সেখানে তারমতো একজন মানুষ কিভাবে কাজ করবে সে প্রশ্নে হিরো আলম বলেন, সংসদে বহু অশিক্ষীত মানুষ রয়েছেন। সংসদে যেমন যোগ্য লোক আছে তেমনি অনেক অযোগ্য লোকও আছে। কেবলমাত্র প্রতীকের কারণে অনেকেই নির্বাচিত হয়ে আসেন। আর আমি দাঁড়ালেই দোষ।
তিনি এর আগেও নির্বাচন করেছেন তারপরও এখন আবার কেনো নির্বাচনে আসছেন জানতে চাইলে একটি টিভি চ্যানেলের সরাসরি টক শোতে হিরো আলম বলেন, তখন আমি স্থানীয় একটি নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়িয়েছি। এবার দলীয় পরিমণ্ডলে দাঁড়াচ্ছি। তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। এর আগে দুই দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন হিরো আলম। একবার নির্বাচন করে ৭১ ভোটে এবং একবার ১৬ ভোটে হেরেছেন বলে জানান টিভি চ্যানেলের টক শোতে।
সংবাদ মাধ্যমকে হিরো আলম এভাবে তার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে হিরো আলমের এই মনোনয়ন গ্রহণকে সমাজের অনেকেই বাঁকা চোখে দেখছেন। অনেকেই পক্ষে ও বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন।
হিরো আলমকে নিয়ে তার বা আরও দশটা মানুষের এই আগ্রহের পেছনে অনেকেই হাস্যকর চরিত্রটাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে অনেকেই আবার একে এক ধরণের “বর্ণবাদ” হিসেবে আখ্যা দেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘হিরো আলম ময়ূরী মনোনয়ন ফর্ম কিনলে দোষ হয়, হাসি ঠাট্টা ট্রল হয়, এটিই হলো বর্ণবাদ।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসে হিরো আলমকে প্রসঙ্গ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে একজন লিখেছেন, ‘হিরো আলম নিম্নস্তর হতে উঠে আসা একজন মানুষ। তিনি তার মতো সংগ্রাম করে আজকের জায়গায় উঠে এসেছেন। তবে তার এই উঠে আসাটা আমাদের অনেকের বর্ণবাদী মন মেনে নিতেও পারছেনা। সেজন্যই তাকে নিয়ে এতো ট্রল হচ্ছে।’
আবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, ‘হিরো আলম রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে যোগ্য নাকি অযোগ্য সেটি নিয়ে কিন্তু আলোচনা হচ্ছেনা, তার শ্রেণী বা ভাষা নিয়েই বেশি কটাক্ষ করা হচ্ছে।’
তাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেছেন, ‘আমাদের মিডিয়ায় কেও সেলিব্রেটি হলে, তাকে নিয়ে কথা হবেই। আমি হিরো এটা আমার একটি পরিচয়, আবার রাজনীতি আমার আরেকটি পরিচয়। কে কোনটাকে নেগেটিভলি নিবে আবার কোনটাকে পজেটিভলি নিবে, সেটিই বিষয়।’
হিরো আলম বলেছেন, ‘লোকেরা কথা শুরু করলে, কথা বলতেই থাকবে, থামবেই না। তাদের সব কথা মাথায় নিলে তো আমি কাজই করতে পারবো না। তাই আমি ওসব কথায় পাত্তা দেই না।’ জাতীয় পার্টি হতে এমপি নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করার কথাও জানিয়েছেন হিরো আলম।
হিরো আলম ঠিক এভাবে তার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন, দেশের মানুষ আমাকে জিরো হতে হিরো করেছে। আজ মানুষের ভালোবাসার কারণেই আমি এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। আমি যদি এমপি হই তাহলে মানুষের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে কাজ করে যাবো। তবে এমপি নির্বাচিত হলেও নিজের গান ও অভিনয় ধরে রাখার কথা জানিয়েছেন হিরো আলম।
দেখুন ভিডিও
https://www.youtube.com/watch?v=5DvpjfuFG8U
https://www.youtube.com/watch?v=P0SXQ5fda0o
https://www.youtube.com/watch?v=ce1gnUVTaUs