দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকের মনেই এমন প্রশ্ন আসতে পারে। আর সেটি হলো কেনো জেব্রার গায়ে ডোরাকাটা দাগ হয়? সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার দুটি জার্নালে নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
বিভিন্ন সময় প্রশ্ন এসেছে জেব্রার ডোরাকাটা দাগ এলো কোথায় থেকে? কেনোই বা এটি এলো? বহুদিন ধরেই চলছে বিষয়টি নিয়ে নানা গবেষণা। সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার দুটি জার্নালে নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
আঙ্গুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) যেমন প্রত্যেকের পৃথক, জেব্রাদের ডোরাকাটা দাগও নাকি তেমনি পৃথক! একটা জেব্রার দাগের সঙ্গে অন্য জেব্রার দাগের নাকি কোনো মিল নেই।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শিকারীদের বিভ্রান্ত করতে ক্যামোফ্লাজ হিসেবেই ডোরাকাটা দাগ জেব্রার গায়ে, এমনটিই বলেছিলেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। তবে এই দাগের পিছনে আদতে কোনও জিন রয়েছে কি না, তা নিয়ে বেশ রহস্য রয়েছে।
ভারতীয় খ্যাতিমান দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে বলা হয়, ২০ লাখ বছরেরও বেশি পূর্বে জেব্রার উৎপত্তি ঘটেছিলো। প্রথমে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ওদের শরীরে ডোরাকাটা দাগ কোনও একটি কারণে তৈরি হয়েছে, যেমন অভিযোজন। পরবর্তীতে আরও ১৭টি তত্ত্ব পান বিজ্ঞানীরা।
জানা গেছে, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-ডেভিসের ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজিস্ট টিম বিভিন্ন তাপমাত্রা, অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করে খুঁজেছেন এর কারণসমূহ। গবেষকদের দাবি, বিষাক্ত সেটসিসহ অন্যান্য মাছি তাড়ানোর জন্যই নাকি জেব্রার গায়ে এমন ডোরাকাটা দাগ।
তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, মাছির প্রকোপ বেশি হলেই জেব্রার ডোরাকাটা দাগের ঘনত্ব নাকি বেড়েছে। নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সমীক্ষার একটি রিপোর্ট। ২০১২ সালের ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাও একই তত্ত্ব দেওয়া হয়েছিলো।
ব্রেন্ডা ল্যারিসনের নেতৃত্বে একদল মার্কিন বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন জেব্রার ডোরাকাটা দাগের উপর। তাদের মত হলো, এই ডোরাকাটা দাগের সংখ্যা এবং ঘনত্ব যে পরিবেশে জেব্রারা বাস করে মূলত সেখানকার তাপমাত্রা দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
তারা তখন দেখতে পান, অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পরিবেশের জেব্রার ডোরাকাটা দাগগুলো মোটা দেখাচ্ছে। আবার গোটা শরীর জুড়ে ব্যাপৃতও।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়ার মতো দেশে যেখানে শীতকালে অপেক্ষাকৃত বেশি ঠাণ্ডা থাকে, সেখানে জেব্রার ডোরাকাটা দাগগুলো অনেক কম। অপেক্ষাকৃত সরু, রঙও খুব হালকা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পা, শরীরের কিছু জায়গায় ডোরাকাটা দাগ প্রায় নেই বললেই চলে। আফ্রিকার অন্যত্র ঠিক এর উল্টো দেখা যায়।
থার্মোরেগুলেশন কিংবা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণই জেব্রার ডোরাকাটা দাগ হওয়া ও সেই দাগের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লাভের প্রধান কারণ বলে মনে করেন ল্যারিসন।
এই বিষয়ে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল রুবেনস্টেইন বলেছেন, মোটা মোটা ডোরাকাটা দাগওয়ালা জেব্রাদের শরীরের বাহ্যিক তাপমাত্রা একই সাইজের, যা অন্যান্য প্রাণী যেমন অ্যান্টিলোপের তুলনায় অনেক কম। তবে এই তত্ত্বও সম্প্রতি খারিজ করেছেন গবেষণারত একদল বিজ্ঞানী।
অপরদিকে হাঙ্গেরির ইওতওভোস লোরান্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী গাভোর হোরবাথ এবং হাঙ্গেরির ভেটেরিনারি মেডিসিন, সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল জানিয়েছে, তাপমাত্রার সঙ্গে জেব্রার ডোরাকাটা দাগের কোনও সম্পর্কই নেই।
বেশ কিছু ব্যারেলের মাধ্যমে পরীক্ষা করার পর তারা বলেন, জেব্রার ডোরাকাটা বাঁকা দাগ কখনই শরীরের ‘কোর টেম্পারেচার’ কমাতে পারে না। কারণ হলো একই সাদাটে ছাই রঙের উপরে সমঘনত্বের ডোরাকাটা দাগের ব্যারেল এবং জেব্রার ডোরাকাটা দাগের ব্যারেলের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
জেব্রার গায়ে এই ডোরাকাটা দাগের পিছনে মেলানিন রঞ্জক এবং জিনের ভূমিকা নিয়ে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। সঠিক বা সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে গবেষকরা তাদের গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। তাদের বিশ্বাস একদিন জেব্রার ডোরাকাটা দাগের সঠিক কারণ তারা উদঘাটন করতে সক্ষম হবেন।