দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দিন যতো গড়াচ্ছে ততোই পৃথিবীর নানা পরিবর্তন আসছে। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুই যেনো পাল্টে যাচ্ছে। আজ দেখবো ৭০০ বছর আগে ভারতের রাজধানী কেমন ছিলো।
আমরা সকলেই জানি যে একটি দেশের রাজধানীই হলো সেই দেশটির প্রাণকেন্দ্র। তাই সেই রাজধানী সব সময় জৌলসুপূর্ণ হয়ে থাকে। আজ রয়েছে এক সময়কার ভারতের রাজধানী আসলে কেমন ছিলো সম্পর্কে কিছু তথ্য।
কর্ণাটকের হাম্পি ছিল তখনকার ভারতের রাজধানী। অথচ এই হাম্পি এখন নিতান্তই একটি ছোট্ট শহর। আজকের কথা নয়, সেই ৭০০ বছর পূর্বে হাম্পিই ছিল মধ্যযুগের হিন্দু রাজ্য বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী। তুঙ্গভদ্রার তীরে পুরনো এই হাম্পি শহরে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে একাধিক মন্দির। তারপর কিছুটা দূরে দক্ষিণ দিকে রয়েছে একাধিক রাজকীয় প্রাসাদ। শহরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে বিরূপাক্ষ মন্দির বা যাকে বলা হয় পম্পাপতির মন্দির। হাম্পির সবচেয়ে পুরনো মন্দিরই হলো এটি। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন পুরনো এই রাজধানী হতে।
এই মন্দিরটির বিশেষত্ব হলো- মন্দিরের প্রবেশ পথে দু’টি গোপুরম ও দু’টি বৃহৎ প্রাঙ্গণ বিদ্যমান। মন্দিরের গর্ভগৃহটি গোপুরমের একেবারেই আড়াআড়ি যাবে বলে সোজাসুজি। দ্বিতীয় গোপুরমটি রায় গোপুরম হিসেবে অধিক পরিচিত। এটি পেরোলেই দেখা যাবে প্রাঙ্গন। সেখান থেকে কিছু দূর গেলেই বাম দিকে পাতালেশ্বরের মন্দির, মুক্তি নরসিংহ ও সূর্যনারায়ণের মন্দির অবস্থিত। ডান দিকে পড়বে লক্ষ্মীনরসিংহ এবং মহিষাসুর মর্দিনীর মন্দিরটি।
এই মন্দিরে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন পাথরের তৈরি বিরূপাক্ষ অর্থাৎ শিবলিঙ্গ বিরাজ করছে পুরো মন্দিরজুড়ে। তারই নাম পম্পাপতি। সেজন্যই জায়গাটির নাম হয়েছে পম্পাক্ষেত্র বা হাম্পি। এর ঠিক উত্তর দিকে দু’টি মন্দির রয়েছে। একটি পম্পাদেবী ও অন্যটি ভুবনেশ্বরী মন্দির। মন্দির হতে বেরিয়ে এলেই দেখতে পাবেন পশ্চিমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাতুঙ্গা পাহাড়। আরও একটি মন্দির সেখানে রয়েছে। এই মন্দিরের নাম বীরভুবনেশ্বরের মন্দির। এখানে উঠলেই বিধ্বস্ত হাম্পির পুরো দৃশ্যটি আপনার চোখে ধরা পড়বে।
এই বিষয়ে ইতিহাস হতে জানা যায়, মন্দির চত্বরে একসময় নানা রকমের দামি-দামি পাথর ও মুক্তোর বাজার বসতো। এখান থেকে আরও বেশ কিছুটা পূর্বদিকে হাঁটলেই কিংস ব্যাল্যান্স। সেখানেই রাজা নিজের ওজনের সমান মণি-মুক্তো-রুপো পাল্লায় মেপে ব্রাহ্মণ এবং গরিবদের নাকি যৌতুক দিতেন। কিংস ব্যাল্যান্সকে পেছনে রেখে একটুখানি গেলেই চোখে পড়বে হাম্পির সবথেকে অমূল্য সম্পদ বিধালা মন্দির। এখান থেকে যখন গাড়িতে করে আসল মন্দিরের দিকে আপনি যাবেন, তখন চোখে পড়বে সারি সারি নানা রকম কীর্তিমান ধ্বংসস্তূপ। এই মন্দিরের ঠিক সামনেই রয়েছে পৃথিবীখ্যাত গ্রানাইট পাথরের রথ।
এই বিষযে ইতিহাসে যা রয়েছে, তা থেকে জানা যায়, কোণারকের রথ এই রথ খোদাই করতে নাকি অনুপ্রাণিত করেছিল। এখন দক্ষিণ দিকে হাঁটলে চোখে পড়বে হেমকুন্টা নামে একটি স্থান। যেখানে অনেকগুলো ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। হেমকুন্টা হতে পূর্ব দিকে হেঁটে দক্ষিণ দিকে ঘুরলেই চোখে পড়বে বিশালাকার গণেশ মূর্তি। একশিলার তৈরি প্রায় ১২ ফুট উচ্চতার এই মূর্তিটি সত্যিই আশ্চর্যজনক একটি মূর্তি।
এবার এখান থেকে প্রায় এক কি.মি দূরত্বে কমলাপুরে রয়েছে আরও বড় শিবলিঙ্গ। গোটা হাম্পি শহরে এটিই হলো সবচেয়ে বড়। এই শিবলিঙ্গটি মূলত পানির মধ্যে স্থাপিত হয়েছে। কারণ হলো এটি একটি জল প্রবাহ মন্দিরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বড় শিবলিঙ্গের কাছেই রয়েছে নৃশিংহদেবতার মূর্তি। তবে বিদেশী আক্রমণে এই মূর্তিটি বর্তমানে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। এর দক্ষিণ দিকে গেলে আপনার চোখে পড়বে বিশাল বিধ্বস্ত রাজপ্রাসাদের অস্তিত্ব। এখানকার লোটাস মহল, কুইন্স বাথ এককথায় সবই অনবদ্য। কুইন্স বাথ বা মহারানির স্নানাগারটির স্থাপত্যশিল্প হিন্দু-মুসলিম শৈলীর মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছিলো। এইগুলো সবই যেনো এখন ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৭০০ বছরের পূর্বের ইতিহাস যেনো এখনও মনে করিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছুই। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ভারতের এই পুরোনো রাজধানী হাম্পি।