দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় উঠে এলো বাংলাদেশের নাম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ১৫টি দেশ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকা শীর্ষ ১৫টি দেশের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে কম ঝুঁকির মধ্যে আছে কাতার।
একটি জরিপে দাবি করা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ১৫টি দেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ৯ম স্থানে। ঝুঁকির মধ্যে থাকা এই ১৫টি দেশের মধ্যে আবার ৯টিই বিভিন্ন দ্বীপদেশ।
২০১৮ সালের বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদনে ১৭২টি দেশের ভূমিকম্প, সুনামি, হারিকেন ও বন্যার ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়। এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সক্ষমতাও যাচাই করা হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়।
জার্মানির রুহর বিশ্ববিদ্যালয় বোখাম ও ডেভেলপমেন্ট হেল্প অ্যালায়েন্স নামে একটি জার্মান বেসরকারি মানবিক সংস্থা যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
এই জরিপে দেখা যায়, গবেষকরা মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিশুদের দুর্দশার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন। তাদের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪টি শিশুর মধ্যে একটি শিশু দুর্যোগ-প্রবণ এলাকায় বসবাস করে।
তাছাড়াও জাতিসংঘের পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, গত বছর সংঘাত-সংঘর্ষ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া অর্ধেকের বেশি মানুষের বয়স ১৮ বছরেরও নীচে।
জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের স্তর বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে বেশিরভাগ দ্বীপদেশের নাম।
তারমধ্যে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভানুয়াতু দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়, তারপরেই রয়েছে তার প্রতিবেশী দেশ টোঙ্গা।
ঝুঁকির তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক দ্বীপদেশ ফিলিপিন্স। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ কোটি। তবে জার্মান গবেষকরা মনে করছেন, ওশেনিয়া সার্বিকভাবে সবথেকে ঝুঁকি-প্রবণ অঞ্চল।
গবেষকদের ধারণা মতে, আফ্রিকার দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হিসেবে শীর্ষ ৫০টি দেশের তালিকায় যেমন স্থান পেয়েছে, ঠিক তেমনি সামাজিক বিপর্যয়ের তালিকাভুক্ত ১৫টি দেশের মধ্যে ১৩টিই আফ্রিকা-ভুক্ত।
এমন পরিস্থিতিকে গবেষকরা চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। সেজন্য তারা উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছেন ইউরোপকে। ইউরোপের দেশগুলোতে সম্প্রতি বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে তীব্র দাবদাহ আঘাত হানে।
অনেক স্থানেই খরা দেখা দেওয়ায় সেখানকার কৃষিখাত সরাসরি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছিল। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলো সে সময় এই তাপদাহ মোকাবিলায় যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেগুলোকে ইতিবাচক উদাহরণ হিসাবে নেওয়ার কথা ভাবছেন গবেষকরা।
ঝুঁকির এই সূচকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কার পাশাপাশি সেই দুর্যোগ মোকাবিলায় সেইসব দেশ কতোটুকু প্রস্তুত সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে হিসাব করা সেই দেশগুলোতে নির্মিত ভবনগুলোর পরিস্থিতি কিংবা বিল্ডিং কোড, দারিদ্রসীমার মাত্রা ও দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।
সে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রবণ হওয়া সত্ত্বেও অনেক দেশের নাম ঝুঁকির তালিকাতে নেই। যেমন- প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা জাপান ও চিলি, এই দুই দেশের নাম শীর্ষ ২০ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের বাইরেই রয়ে গেছে।
অপরদিকে হল্যান্ড যারা শত শত বছর ধরে সমুদ্রের স্তর বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে। অথচ ঝুঁকির তালিকায় তাদের অবস্থান ৬৫টিতে রাখা হয়েছে। এদিকে মিসরের মতো অন্যান্য দেশগুলোর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়ার আশঙ্কা অবশ্য কম।
ঝুঁকির তালিকায় দেশটির অবস্থান হলো ১৬৬ তম। তারপরও দুর্যোগ মোকাবিলা এবং বিপর্যয়ের সূচকে তারা জাপানের চাইতেও খারাপ অবস্থানে রয়েছে। কারণ হলো দেশটি বর্তমানে সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত।
অবশ্য এতো খারাপ অবস্থানের পরও একটি ভালো খবর হলো, ২০১৮ সালকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি সচেতনতার বছর বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। বিশ্বের মানুষের মধ্যে এবারই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকাটা কতোখানি জরুরি একটি বিষয়।