দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার হাঁপানি নিরাময়ে মৎস্য থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে! এই থেরাপির ঘটনাটি ভারতের হায়দ্রাবাদের বলে অনলাইন সূত্র জানিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে মাছ একটি প্রিয় খাদ্য। আর বাঙালির জীবনে মাছ ছাড়া তো এক বেলাও চলে না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে সুস্বাদু এই প্রাণিজ আমিষটি হাঁপানি নিরাময় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের দক্ষিণের শহর হায়দ্রাবাদের গৌড় পরিবার বিতর্কিত এই মৎস্য থেরাপি দিয়ে থাকেন। বছরে শুধু একবারই এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্ষা আসার ঠিক আগে এই থেরাপি নিতে সেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ হাঁপানি রোগী ভিড় জামায়।
বাথিনি মৃগশিরা নামে গৌড় পরিবার ১৬০ বছর ধরে এই চিকিৎসা দিয়ে আসছেন বলে তাদের দাবি। এই চিকিৎসার নাম দেওয়া হয়েছে বাথিনি মৎস্য থেরাপি। এতে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি মাপের ছোট্ট একটা মৌরালা বা সার্ডিন জাতীয় মাছ ঔষধি গুণযুক্ত বিশেষ গাছ-গাছড়ায় বানানো হলদেটে রঙের পেস্ট বা লেই দিয়ে মুড়ে রোগীকে গিলিয়ে কিছুক্ষণ মুখ বন্ধ করিয়ে রাখা হয়। মাছের উপরি ভাগ যেহেতু পিচ্ছিল থাকে তাই গিলতে অসুবিধা হয় না। গেলানোর কাজটা করেন পরিবারের কিছু লোক এবং কিছু ভলেন্টিয়ার।
কীভাবে এই থেরাপি কাজ করে
ওই পরিবারের মতে, বিশেষ ভেষজ ওষুধ মাখানো ওই জ্যান্ত মাছ গলা দিয়ে নামার সময় পাখনা এবং পুচ্ছ নাড়াতে থাকে, তাতে গলার ভেতরের জমা শ্লেষ পরিষ্কার হয়ে যায়। হাঁপানির উপশম হয়। ওষুধ প্রয়োগের তিন ঘণ্টা আগে এবং তিন ঘণ্টা পর পর্যন্ত পেট একেবারে খালি রাখতে হয়। এ সময় পানি পর্যন্ত খাওয়া নিষেধ। তারপর ৪৫ দিন নির্দিষ্ট আহার গ্রহণ করতে হবে। এই ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া বাইরের আর কেও আজ পর্যন্ত জানে না বা জানানো হয় না।
পরিবারের মতে, ওই ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা গোপন রাখা হয়। জনৈক সাধু পরিবারের বৃদ্ধ প্রপিতামহকে এর ফর্মুলা দিয়ে বলেছিলেন, অন্য কাওকে যেন তা জানানো না হয়। পরিবারের বাইরে অন্য কেও জানলে ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। চিকিৎসায় কাজ হবে না। ভেষজ ফর্মুলা গৌড় পরিবারের এক প্রজন্ম থেকে বাহিত হয়ে চলেছে পরের প্রজন্মে। এই মৎস্য থেরাপি দেওয়া হয় বিনা পয়সায়। শুধু হায়দ্রাবাদ শহর ছাড়া অন্য কোথাও এই চিকিৎসা দেওয়া বারণ। দেবার নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা হয় জ্যোতিষশাস্ত্র মতে। সেটা পড়ে বর্ষা আসার ঠিক আগে, জুন মাস নাগাদ।
গৌড় পরিবারের দাবি, কোনও হাঁপানি রোগী যদি মৎস্য থেরাপির নিয়মবিধি ঠিকমতো পালন করেন, তাহলে তার হাঁপানি ১০০ ভাগ ভালো হয়ে যাবে। ভেষজ ওষুধের ফর্মুলা গোপন রাখার রহস্য নিয়ে কয়েকটি যুক্তিবাদী সংগঠন, বিজ্ঞানী এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল আদালতে যায়। তাদের অভিযোগ, ভেষজ ওষুধের নামে যা দেওয়া হয়, তার মধ্যে থাকতে পারে স্টেরয়েড, ভারি ধাতু কণা এবং পারদজাতীয় উপাদান। কাজেই তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। আদালতের নির্দেশে ভেষজ উপাদান পরীক্ষা করা হয় এবং তাতে ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া যায়নি। অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট রায় দেন, ওই ভেষজে ক্ষতিকারক উপাদান যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনই ঔষধিগুণও পাওয়া যায়নি।
অনেকের মতে, লাখ লাখ মানুষ তাদের বিশ্বাসবশত যখন এই চিকিৎসা নিচ্ছেন তখন তাদের সেই বিশ্বাসে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। দেশবিদেশের লাখ লাখ লোক প্রতিবছর এই থেরাপি নিতে আসেন, তাতে কারোর খারাপ কিছু হয়েছে এমন খবর নেই। চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, কোনও চিকিৎসা পদ্ধতিই ১০০ শতাংশ কার্যকর হয় না। মৎস্য থেরাপিতে অনেকে ভালো যে হয়েছেন সেটাও মিথ্যা নয়। তবে এটি কোনও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি নয় বলেই চিকিৎসকরা মত দিয়েছেন। তথ্যসূত্র: অনলাইন