২০১৮ সালে পৃথিবীতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ২০১৮ সালে পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। এই সব ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে পৃথিবীতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। ২০১৮ সালে ঘন ঘন দেখা দিয়েছে হারিকেন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত ও ভুমিকম্প। গত ১২ মাসে এই গ্রহটিতে এসেছে স্থায়ী কিছু পরিবর্তনও। জেনে নিন এমন কয়েকটি পরিবর্তনের কথা।

কিলাউইয়ার অগ্ন্যুতপাত

২০১৮ সালে বিগত ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুতপাত ঘটেছে হাওয়াইয়ের এই আগ্নেয়গিরিটিতে। এপ্রিলের শেষ হতে আগস্টের শুরু পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার সুইমিং পুল ভরে ফেলার সমপরিমাণ লাভা উদগিরন করে এই আগ্নেয়গিরিটি। এই অগ্ন্যুতপাতের কারণে পুরো একটি লেকের পানি শুকিয়ে যায় এমনকি নতুন একটি দ্বীপেরও জন্ম হয়।

নিউজিল্যান্ডের সচল দ্বীপ

২০১৮ সালে গবেষকরা জানতে পারেন যে, নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের আরও এক ফুট কাছাকাছি চলে এসেছে এই সাউথ আইল্যান্ড। ২০১৬ সালে ৭.৮ মাত্রার একটি ভুমিকম্পের পর এই দ্বীপদুটো কাছাকাছি আসতে শুরু করে এবং এই বছর ২০১৮ সালে তারা এক ফুট কাছাকাছি চলে আসে।

আফ্রিকার গ্রেট রিফট

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে গ্রেট রিফট ভ্যালি হলো এমন একটি বিশাল খাদ যা কিনা একটু একটু করে মিলিয়ন বছর ধরে পালটে যাচ্ছে। তবে এই বছর সেখানে হঠাৎ করেই বিশাল এক পরিবর্তন দেখা দেয়। দক্ষিণ-পশ্চিম কেনিয়ায় এই বছরের মার্চে বিশাল এক ফাটল দেখা দেয়। এতে একটি বড় রাস্তা মাঝখান থেকে অর্ধেক হয়ে যায় এবং বাড়িঘর দু-টুকরো হয়ে যায়। ৫০ ফুট লম্বা এই ফাটল এই বছরের মার্চের ১৯ তারিখে আবির্ভূত হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন এমন আরও ফাটল দেখা দেবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। একটা সময় আফ্রিকা মহাদেশ হতে পৃথক হয়ে যাবে পূর্ব আফ্রিকা।

বিদায় হিমবাহ

অক্টোবর মাসে ম্যানহ্যাটন শহরের চেয়ে ৫ গুণ বড় আকারের একটি হিমবাহ ভেঙ্গে যায় অ্যান্টার্কটিকার পাইন আইল্যান্ড গ্লেসিয়ার হতে। ১১৫ বর্গ মাইল আকারের এই হিমবাহটি এই বছর ভাঙ্গার কথা ছিলো না। আগে প্রতি ৬ বছরে একটি করে হিমবাহ ভাংত পাইন আইল্যান্ড গ্লেসিয়ার হতে। তবে ইদানিং প্রতিবছর একটি করে ভাংছে। সেজন্য পরিবেশ বিপর্যয় দায়ী হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বেশকিছু দাবানল দেখা দেয় এ বছর। এই রাজ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর দাবানল দেখা দেয় ৮ হতে ২৫ নভেম্বর। এই দাবানলের আগুনে মারা যায় ৮৬ জন মানুষ। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১৫৩,৩৩৬ একর এলাকা।

ক্রমেই উঁচু হয়ে আসছে অ্যান্টার্কটিকা

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের নিচের বেডরক কিংবা ভিত উঁচু হয়ে আসছে। ২০১৮ সালে গবেষকরা জানতে পারেন যে, প্রতিবছর ১.৬ ইঞ্চি উঁচু হচ্ছে এই মহাদেশ। সম্ভবত অ্যান্টার্কটিকার বরফ পাতলা হয়ে আসার কারণে এই ঘটনাটি ঘটছে। বরফের ওজন কমে যাওয়ায় উঠে আসার সুযোগ পাচ্ছে এই মহাদেশটি। তবে এই ঘটনা একদিক দিয়ে ভালো এবং আরেক দিক দিয়ে খুবই খাবার। উঁচু হয়ে আসায় অ্যান্টার্কটিকার বরফ আগের তুলনায় বেশি স্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে দিয়ে দেখা যায় যে, বরফের পরিমাণ কমে যাচ্ছে গবেষকদের ধারণার চেয়েও আরও দ্রুত।

একটি দ্বীপ উধাও

এ বছরের অক্টোবরে হাওয়াইইয়ের একটি দ্বীপ উধাও হয়ে যায়। এই দ্বীপে বিলুপ্তপ্রায় গ্রিন সি টার্টল এবং হাওয়াইয়ান মঙ্ক সিল থাকতো। দ্বীপটি না থাকাতে তারা বিপদে পড়ে গেছেন। এই দ্বীপটি উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ হলো একটি ক্যাটাগরি ৫ হারিকেন, যে হারিকেনের নাম ওয়ালাকা।

স্লাইডিং আইল্যান্ড

মাদাগাস্কার এবং মোজাম্বিকের মাঝামাঝি ছোট্ট একটি দ্বীপ হলো মায়োট। ১১ নভেম্বর সেখানে রহস্যময় এক ঘটনা দেখা গেছে। দ্বীপটি পূর্বে ২.৪ ইঞ্চি এবং দক্ষিণে ১.২ ইঞ্চি সরে গিয়েছিলো। এরপর সেখান থেকে একটি গুঞ্জন সৃষ্টি হয় যা সিসমিক স্কেলেও ধরা পড়ে। এই গুঞ্জনটির কারণ এখন পর্যন্ত ধরতে পারেননি গবেষকরা।

একের পর এক টাইফুন এবং হারিকেন

এই বছরে (২০১৮ সালে) ঘন ঘন দেখা দিয়েছে হারিকেন, টাইফুন এবং সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোাগ। ২০১৮ সালে আটলান্টিকের ওপরে দেখা দিয়েছে ৮টি হারিকেন। অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগরে দেখা দেয় অন্তত ১৩টি হারিকেন।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ফুটন্ত কাদা

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা দিয়েছে কাদায় ভর্তি এক গেইজার বা গরম পানির প্রাকৃতিক এক ফোয়ারা। এই কাদার ফোয়ারা ১৮ ফুট গভীর এবং ৭৫ ফুট চওড়া। এটি বেড়েই চলছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। গেইজারের ফুটন্ত কাদার কারণে আশেপাশের এলাকায় অবকাঠামো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটি আরও বড় হলে রেললাইন, হাইওয়ে ও কিছু দামি অপটিক কেবল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি্ও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।