দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে গ্রেফতার করে সামরিক হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে মুরসির সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ করলে ৩ জন নিহত হয়।
বুধবার রাতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর কায়রোর রাজপথে সেনা টহল দিচ্ছে। নতুন অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর শপথ নিয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ বাদিকে। মুসলিম ব্রাদারহুডের ৩০০ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে সামরিক কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, গ্রেফতারের পর মুরসি ও ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক সেনা কর্মকর্তা। বিচার বিভাগের অবমাননা করায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর নির্বাচিত পার্লামেন্টও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলি মানসুর মিসরের অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি পতিত স্বৈরাচার হোসনি মোবারকের আমলে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে গতকাল শপথ গ্রহণের পর অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর বলেছেন, ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারির বিপ্লব (যে বিপ্লবে হোসনি মোবারকের পতন হয়েছিল) সংশোধন করার জন্য জনগণ তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাষণে তিনি শিগগিরই নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্দিষ্ট করে প্রেসিডেন্ট কিংবা পার্লামেন্ট নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষণা করেননি। ভাষণে অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডকেও আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানে মুরসি সরকারের পতন ঘটানোর পর রাজধানী কায়রোসহ মিসরের সব শহরের রাজপথে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান। তবে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে গতকাল শুক্রবার কায়রোতে সমাবেশ ডাকে মুরসি সমর্থক ইসলামপন্থি দলগুলো। মুসলিম ব্রাদারহুড মুখপাত্র জেহাদ আল হাদ্দাদ বলেছেন, গ্রেফতারকে আমরা ভয় পাই না। নেতাকর্মীদের আটক ও হয়রানি করার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানে মাত্র এক বছরের মাথায় নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মিসরে অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলেছে, মুরসি যদি হয় একটি রোগ, তবে সামরিক অভ্যুত্থানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তবে মধ্যপ্রচ্যের বেশিরভাগ দেশ মিসরের এ অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। সিরিয়া বলেছে, মুরসিকে উৎখাত করা একটি ‘বিরাট সাফল্য’। খবর : এএফপি, আল আহরাম ও গার্ডিয়ান।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা ছাড়তে সেনাবাহিনীর দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম পার হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পর ৩ জুলাই গভীর রাতে মিসরের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত ও সংবিধান স্থগিত করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করা হবে।
গত ৪ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে একটি সামরিক দফতরে আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন মুসলিম ব্রাদারহুডের এক শীর্ষ নেতা। তিনি জানান, মুরসির শীর্ষ সহযোগীদের মধ্যে অনেককে আটক করা হয়েছে। মুরসির ঘনিষ্ঠভাজন এসাম এল হাদ্দাদের ছেলে জিহাদ এল হাদ্দাদ বলেন, মুরসি ও তার সহযোগী সব কর্মকর্তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল রিপাবলিকান গার্ডস ক্লাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। পরে মুরসিকে তার সহযোগীদের কাছ থেকে আলাদা করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
সামরিক বাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গণরোষ থেকে রক্ষা করার জন্যই মুরসিকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইউটিউবে পোস্ট করা রেকর্ডকৃত এক বক্তৃতায় মুরসি নির্বাচিত বৈধ সরকারকে রক্ষায় তার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার ওই ভাষণ সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শপথ নিলেন মানসুর
অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট আদলি আল মানসুর পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল তার শপথ অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। শপথ গ্রহণের পর তিনি তার ভাষণে মিসরের সেনাবাহিনী ও জনগণের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শাসকদের তোয়াজ করার দিন শেষ। ৩০ জুন থেকে শুরু হওয়া গণআন্দোলনকে তিনি মহিমান্বিত বলেও আখ্যা দেন। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, সংবিধান ও আইনের প্রতি সম্মান এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। জনগণের দেওয়া দায়িত্ব পালনে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।