দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের বিজ্ঞান জগতে সিলিকন একটি সুপরিচিত মৌলের নাম। এই সিলিকন আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেই বিষয়টি নিয়েই আমাদের আজকের প্রতিবেদন। সিলিকন সার্কিট মূলত আমাদের বিদ্যুৎ বাঁচাবে!
পৃথিবীতে সবথেকে বেশি যে মৌলগুলো আমরা পেয়ে থাকি তার মধ্যে সিলিকনের অবস্থান ৮ম তম। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১৪। যদিও আমাদের পৃথিবীতে খুব কম সিলিকন আমরা বিশুদ্ধ অবস্তায় পাই। সিলিকনকে আমরা মূলত ধুলি, বালি গ্রহাণুপুঞ্জ এবং গ্রহসমুহে সিলিকনের অক্সাইড আকারে পেয়ে থাকি যা আমরা সিলিকেট নামে চিনি। বিজ্ঞানী আন্টনিয় ল্যাভয়েশিয়ে ১৭৮৭ সালে সর্ব প্রথম এই সিলিকন আবিষ্কার ও শনাক্ত করেন। আমাদের পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে সিলিকেট যৌগ রয়েছে। আমাদের পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় ৯০ শতাংশ এই সিলিকেট যৌগ দ্বারা গঠিত, অক্সিজেনের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক যৌগ এই সিলিকেট অক্সাইড। সম্প্রতি ভারতের এক বিজ্ঞানী অয়ন কর্মকার সিলিকনের সার্কিট তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন যার দ্বারা আমরা খুব সহজেই আমাদের বিদ্যুতকে আরো সাশ্রয়ী করতে পারবো। তার মতে উচ্চমাত্রার রেডিও-তরঙ্গের সার্কিট তৈরির কাজে সিলিকন ব্যবহার করা হলে আমরা অতিব অল্প সময়ে আমাদের বিদ্যুতের খরচের হার কমে আসবে। এই সিলিকন সার্কিট আমাদের বিদ্যুতকে করবে আরো সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক।
অয়ন কর্মকার কলকাতার হিন্দু পরিবারের একটি ছেলে। তিনি বালিগঞ্জ জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনের এই প্রাক্তনী দক্ষিণ শহরতলির একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন টেকনোলজিতে বিটেক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি দুর্গাপুর এনআইটি থেকে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমটেক পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতেই ২০০৬ সালে তিনি ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরোয় যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি চণ্ডীগড়ের সেমি কন্ডাক্টর ল্যাবরেটরির অ্যাডভান্স মাইক্রো অ্যান্ড ন্যানো সিস্টেমস ডিভিশনে কর্মরত রয়েছেন।
গবেষকদের মতে, সম্প্রতি সকলেই কোন কিছু উদ্ভাবনে ছোট সার্কিট এর চাহিদা পোষণ করেন কারণ সার্কিট ছোট হওয়ায় যন্ত্রের আকার ছোট হয়। ছোট যন্ত্রের কার্যপ্রণালী পরিচালনা করতে শক্তি কম খরচ হয় যার ফলে আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে।
সম্প্রতি আমাদের তৈরি বা আবিষ্কৃত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ও প্রযুক্তিতে ছোট ছোট সার্কিটের ব্যবহার হয়ে থাকে। সিলিকন সার্কিটের ব্যবহারও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন এর পাশাপাশি আল্ট্রা লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন প্রযুক্তিতেও সিলিকন সার্কিটের ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে বিদ্যুৎ এর পাশাপাশি আর্থিক লাভবান হয়েছে ব্যাবসা ক্ষেত্র। অপরদিকে মাইক্রোওয়েভ বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রজুক্তির ক্ষেত্রে সিলিকনের তৈরি সার্কিট ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতির উপর কাজ করছেন নানান দেশ বিদেশের বহু বিজ্ঞানী। বর্তমানে অয়ন কর্মকার নিজেই সেই কাঙ্ক্ষিত চিপ তৈরি করার রাস্তা ও দিশা আবিষ্কারে নিজেকে রত করেছেন।
তার মতে, সিলিকন সার্কিট এত দিন পর্যন্ত উচ্চ কম্পাঙ্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত না বা উপযোগী ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি অয়ন কর্মকার মনে করেন উচ্চ কম্পাঙ্কের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সার্কিটে সিলিকন ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই পদার্থের রোধক্ষমতা পালটিয়ে তাকে মিলিমিটার বা মাইক্রওয়েভে ব্যবহারের জন্য উপযোগী করা সম্ভব হয়েছে যাকে বলে হয়ে থাকে সি আর এফ প্রযুক্তি। অয়ন কর্মকার ও আরো অন্যান্য বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় এই পদ্ধতি যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে সক্ষম হই তাহলে অচিরেই আমাদের দেশের বিদ্যুৎ রক্ষার্থে এই সিলিকন সার্কিট একটি চমৎকার ভুমিকা পালন করবে।
এই সার্কিট ব্যবহার করে আমরা আমাদের বাড়ির আলো, বৈদ্যতিক পাখা, এসির ব্যবহার, চিকিৎসা, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি কাজে আমাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমেই বেড়েছে যাকে আমরা এক কথায় ইনটারনেট অব থিংস বলা হয়। সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ৫জি নেট পরিষেবা যার জন্য অধির আগ্রহে আমরা সবাই, এই টেরাহার্জ প্রযুক্তির জন্যেও আমাদের ছোট থেকে ছোট সার্কিটের প্রয়োজন যা আমরা এই সিলিকন দ্বারা তৈরি করতে পারি। টেরাহার্জ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা সার্কিটে সিলিকনের ব্যবহার করতে সক্ষম হই তাহলে খুব দ্রুতই আমাদের বিদ্যুতের ব্যবহারের হার অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।