দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্ষা যেন তৃষ্ণার্ত প্রকৃতির চিত্তে বয়ে নিয়ে আসে শীতলতা। বর্ষায় আসে আমাদের মনে সজীবতা। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে আমাদের প্রাণকে সজীব ও প্রানবন্ত করতে আগমন ঘটে বর্ষার।
শিল্পীর গানেঃ
মন হারাবার আজি বেলা
পথ ভুলিবার খেলা
মন চায় …মন চায় …
হৃদয় জড়াতে কারো চির -ঋণে
আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে . . .
সাধারণত বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়ে থাকে প্রাকৃতিক নিয়মেই। বর্ষাকালে আমাদের দেশের মৌসুমি বায়ুর মাত্রা বেড়ে যায় যার ফলে খুব ভারি মাত্রায় আমাদের নানান অঞ্চলে বৃষ্টি লক্ষ করা যায়। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাতে এর প্রভাব বেশি হলেও পরবর্তীতে এই মৌসুমি বায়ু ধিরে ধিরে আমাদের সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক সুন্দরতার পাশা পাশি এই ঋতুতে আমাদের হতে পারে নানান শারীরিক জটিলতা ও সাস্থ সমস্যা।
এ সময়ে আমাদের শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ও নানান শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। সম্প্রতি আমাদের দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। এই বর্ষাকালে এডিস মশা সহ নানান সব মশার বংশ বিস্তার ঘটে বিভিন্ন জমে থাকা পরিত্যক্ত পানিতে। আমাদের বাড়ির পানির টব, পরিত্যক্ত গামলা, ডাবের খোসা, টায়ার, বোতল ইত্যাদি বিভিন্ন যায়গার জমে থাকা পানিতে মশা তার বংশবিস্তার করে থাকে যার ফলে আমাদের হতে পারে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো ভয়ংকর সকল রোগ। অতএব আমাদের সকলের অবশ্যই আমাদের আশেপাশের এলাকা ও পরিবেশ খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে আর খেয়াল রাখতে হবে যাতে মশারা তাদের বংশবিস্তার করার সুজগ না পায়।
বর্তমানে বর্ষায় গরমের মাত্রাও কোন অংশে কম নয় তাই আমাদের এই হঠাৎ গরম কিংবা হঠাৎ ঠাণ্ডার প্রকোপ আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রক কক্ষ থেকে গরমের প্রবেশের ফলে আমাদের শরীরে দেখা দেয় জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা, নিওমনিয়া সহ নানান সমস্যা।
যারা আমাদের মাঝে বয়স্ক আছেন তাদের নানান শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা দেখা যায় এই ঠাণ্ডা গরমের তারতম্যের ফলে এবং যাদের সিওপিডি আছে তাদেরকেও সম্মুখীন হতে হয় নানান সমস্যার।
বর্ষার ফলে আমাদের শহর নগরের বিভিন্ন যায়গায় পানি পূর্ণ হয়ে যায় বা পানি ভালভাবে নিষ্কাশন হতে পারে না যার ফলে এই বর্ষার পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করে এবং সৃষ্টি করে নানান পানি বাহিত রোগ যেমন- ডায়েরিয়া, জন্ডিস, কলেরা, টায়ফয়েড সহ বিভিন জটিল রোগ সমুহ। এছাড়াও গ্রাম অঞ্চলের খালবিলের পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে খাবারের পানির সমস্যা দেখা যায়। শিশুদের দুবে মরে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এই সময়ে সাপে কাটার সংখ্যাও থাকে অনেক। অতিরিক্ত বজ্রপাতের কারনের আমাদের দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বর্ষায় করণীয়ঃ আমাদের খাবার পানি গ্রহণের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। আমরা যাতে আমাদের খাবারের পানি সবসময়ে ফুটিয়ে পান করি সেদিকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। আমরা যাতে তিব্র গরম থেকে সরাসরি ঠাণ্ডা পানি বা ফ্রিজের অতীব ঠাণ্ডা পানি গ্রহণ না করি। বর্ষাকালে আমাদের নানান পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি বিভিন্ন চর্ম রোগ হতে পারে তাই আমাদের সকলের ময়লা পানি থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি আমাদের কোন কারনে ময়লা পানি শরীরে লাগে তাহলে যতদ্রুত সম্ভব পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বাড়িতে বা তার আশেপাশে পরিস্কার রাখতে হবে যাতে মশা বংশবিস্তার করতে না পারে। মশার কামর থেকে বাঁচতে আমাদের অবশ্যই মশারী ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া নানান মশা নাশক কয়েল, স্প্রে, লিকুইড রিফিল ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
বজ্রপাতের সময় বা ঝড়ের ক্ষেত্রে বাইরে থাকা যাবে না। ঝড় অথবা বজ্রপাত চলাকালিন কোন খোলা ময়দানে কাজ করা যাবে না কোন গাছের নিচে থাকা যাবে না।
বর্ষার সময়ে আমাদের শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে তারা রোগে আক্রান্ত না হয়। দুগ্ধ পোষ্য শিশুদের নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এতে তারা নিওমনিয়া, ডায়রিয়া থেকে নিস্তার পায়। এছাড়া যেকোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।