দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন মানুষও সমাজে রয়েছে যে কুকুরদের মাংস-ভাত খাওয়ানোর জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ করে! শুধু তাই নয়, নিজের গহনা-গাটিও বিক্রি করে দিয়েছেন!
রাস্তার বেওয়ারিশ প্রায় ৪০০টি কুকুরকে প্রতিদিন দুপুরে মাংস-ভাত খাওয়ান এক নারী। এজন্য প্রতিমাসে তাকে ব্যয় করতে হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তিনি প্রায় কয়েক বছর ধরেই প্রতিদিন কুকুরদের খাইয়ে আসছেন। কিন্তু এমন একটি কাজ করতে গিয়ে তাকে বইতে হচ্ছে ৩ লাখ টাকার ঋণের বোঝা! শুধু তাই নয় তার সমস্ত গহনা-গাটিও বিক্রি করতে হয়েছে!
এমন একটি কাজে তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরাও বিরোধিতা করেছেন। তবুও পিছপা হননি তিনি। অপরদিকে এই কাজ করতে হয়েছেপ্রচুর অর্থব্যয়। তাই তিনি ব্যাংক হতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণও নিয়েছিলেন।
আবার নিজের প্রায় ২ লাখ টাকার সোনার গয়না বিক্রি করে কুকুরদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও রাস্তার কুকুরগুলোর চিকিৎসাতেও তিনি অর্থব্যয় করেন প্রচুর অর্থ। এখনও তিনি পথকুকুরদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত।
এমন একটি মহৎ কাজ করেন ভারতের পশ্চিমকল্যাণী বি ব্লকের এমএ পাস গৃহবধূ নীলাঞ্জনা বিশ্বাস। এই নারী বড় হয়েছেন খড়গপুরে। তার বাবা খড়গপুর আইআইটির একজন প্রাক্তন অধ্যাপক। পশু-পাখির প্রতি তার ভালোবাসা খুব ছোট থেকেই।
এই বিষয়ে কোলকাতার সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজের ব্যক্তিগত সঞ্চয় তিনি ব্যয় করে চলেছেন পথকুকুরদের খাওয়ানো এবং চিকিৎসার জন্য।
নীলাঞ্জনা বিশ্বাস ওই সংবাদ মাধ্যমকে জানান, পথ কুকুরদের প্রতিদিন দুপুরে মুরগির মাংস এবং ভাত খাওয়ানো হয়। সেজন্য তিনজন কর্মীও রয়েছেন। তাদের সাম্মানিক বাবদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তার কর্মী সঞ্জীব দাস টোটো চালিয়ে কল্যাণী শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কুকুরের খাবার বহন করেন।
সেইসঙ্গে নীলাঞ্জনা বিশ্বাস নিজের স্কুটারে করেও একইভাবে কিছু কিছু স্থানে গিয়ে খাবার পরিবেশন করেন। কখনও কখনও মায়ের সঙ্গে যায় তার ছেলে আশুতোষও।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাড়িতে কুকুরের রান্নার জন্য আলাদা ঘরও রয়েছে। রয়েছে মাংস রাখার জন্য ফ্রিজ।অপরদিকে কুকুরদের চিকিৎসার দিকটিও নিজেই দেখেন নীলাঞ্জনা বিশ্বাস।
শুধু পশু-পাখিই নয়, দুঃস্থ মানুষকেও সাহায্য করে থাকেন নীলাঞ্জনা বিশ্বাস। কিছুদিন পূর্বেই তিনি এক বৃদ্ধা ভিখারিকে পোশাক দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করে দেন। অন্য ঘটনায় মাথায় ঘা হওয়া এক পাগলকে দু’দিন চিকিৎসাও করান নীলাঞ্জনা বিশ্বাস। যদিও পরে ওই পাগল ব্যক্তি পরে লাপাত্তা হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, দীপাবলিতে দুঃস্থ পরিবারদের আতসবাজি, মোমবাতি, খাবার ও পোশাক বিতরণও করেন নীলাঞ্জনা বিশ্বাস।
এই বিষয়ে নীলাঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, ঋণ করেও রাস্তার কুকুরদের আমি খাইয়ে চলেছি। তবে আমি ডায়াবেটিক এবং হার্টের রোগী। ভবিষ্যতে এদের কী হবে তাই নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত। কল্যাণী পৌরসভার কাছে কুকুরগুলির পুনর্বাসনের আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি নীলাঞ্জনা বিশ্বাস। যদি পৌরসভা বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর জন্য কিছু করে তবে নীলাঞ্জনা বিশ্বাস শান্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন।