দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে হাজারো ঘটনার মাঝে সব থেকে আলচিত ঘটনা হল আগুনে পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস। রেকর্ড হারে অতীব দ্রুততম দাবানলের কবলে পড়ে অসহায়ের মত পুড়ছে অ্যামাজন জঙ্গল। অ্যামাজনের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সহায়তার আশ্বাস এসেছে।
স্যাটেলাইট ইমেজের ব্যবহারে জানা যায় আগুনের বিস্তার ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি পুড়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রেইনফরেস্ট অ্যামাজন। এই আগুন ছড়িয়ে পরেছে খুবি ভয়াবহ হারে যার মধ্যে উত্তরাঞ্চলে রোরাইমা, একার, রনডোনিয়া এবং আমাজোনা রাজ্যে, পাশাপাশি মাতো গ্রোসো ডো সুল এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। আগুনের এমন চরম মাত্রা এর আগে কখনো দেখা যায় নি। গত ১৫ই আগস্ট থেকে জলছে পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদনকারী মহাজঙ্গল অ্যামাজন।
অ্যামাজনের আগুন নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সকল গনমাধ্যম প্রতিবেদন করে চলেছে অবিরত। চলছে আগুন নিয়ন্ত্রনের কিছু প্রচেষ্টা যা দাবানলের তুলনায় অতীব স্বল্প। অবশেষে অ্যামাজনের এই ভয়াবহ আগুনের নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ব্রাজিল সরকার আন্তর্জাতিক সুরক্ষা সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে ইচ্ছা পোষণ করে আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব দরবারে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইল বলসোনারো তার এক বার্তা বিবৃতিতে এই কথা প্রকাশ করেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন যে পরিমাণ তোহোবিল আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে তার সম্পূর্ণ পরিচালনা ব্রাজিল সরকারের অধিনেই পরিচালিত হবে। এই খবরটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর কাছে প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ওটাভিও রেগো ব্যারোস বলসোনারো । এর মাঝে গত কয়েক দিনে অ্যামাজনের আগুন আরো এক হাজার ২০০ টির বেশি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে এর মাত্রা হবে আরো গুরুত্বর।
আগুন দিনে দিনে যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে। নতুন করে বিভিন্ন স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ব্রাজিলের সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে ছয়টি রাজ্য যেখানে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের ভয়ংকর কুণ্ডলী। সামরিক বাহিনীর সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি সেনা সহায়তা চেয়েছে রোরাইমা, টোকানটিন্স, একর, পারা, রন্ডোনিয়া, এবং ম্যাটো গ্রোসোর মত রাজ্য গুলো। অ্যামাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ২০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা করেন যা বাজিলের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ অনিক্স লোরেনি দ্বারা গ্রহণে নাকচ করা হয়। ব্রাজিলের আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা গ্রহণের দ্বিমত পোষণের জন্য ব্রাজিলিয়ান সরকার বিশ্ব দরবারে সমালোচনার মুখে পতিত হন।
ফ্রান্সের প্রধান মন্ত্রীর প্রতি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ অনিক্স লোরেনি উল্লেখ করেন যে নটরডেম গির্জা যা বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন তার আগুন নিয়েই কিছু করতে পারেননি ম্যাক্রোঁ আর এখন আমাদের শিক্ষা দিতে এসেছেন তিনি। এদিকে মহা জঙ্গল অ্যামাজন বন উজাড়ের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ জাতিসংঘের নিয়ম নিতি মেনে কাজ করে চলেছে ব্রাজিল সরকার বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্টো আরাউজো। তাদের মতে বহির্বিশ্ব অ্যামাজনকে রক্ষার কোথায় অ্যামাজন জঙ্গলকে দখল করার চেষ্টা করছেন।
২০১৯ সালের এ পর্যন্ত ৭৪ হাজারের বেশি দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে অ্যামাজনে এমন পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স সেন্টার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতে এই আগুনের জন্য ব্রাজিলের ডানপন্থী ও বাণিজ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো দায়ী। ব্রাজিলের ডানপন্থী ও বাণিজ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো দেশের পরিবেশবাদীদের কাছে অ্যামাজনকে পুড়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য তোপের ও সমালচনার মুখে পড়েছেন।
পরিবেশ বিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবীর মহামূল্যবান এই বনকে রক্ষার্থে ব্রাজিলের রাজনৈতিক পরিবর্তন খুবি জরুরী। ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থায় বরাদ্দ তোহোবিলের প্রায় ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুতত্ত্ব বিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়াদভিন্দার মাহি। এই তোহোবিলের জোগান কমে যাওয়াতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ অচিরেই বন্ধ করে ফেলতে হয়েছে। তাদের মতে ব্রাজিলের নতুন সরকার আসার পর থেকেই অ্যামাজনের আগুন লাগার মাত্রা বেড়ে চলেছে যা সারা বিশ্বে সকলের কাছে দৃশ্যমান। সুতরাং অ্যামাজন রক্ষার্থে ব্রাজিলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতি পরিবর্তন আনতে হবে।