দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর মোবারক পাড়া গ্রামে সাদেকুল ইসলাম (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে গত ৩ বছর ধরে কখনও শিখল বন্দি, আবার কখনও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে!
সাদেকুল ইসলাম পাগলামি করে মানুষের ক্ষতি করছে এমন অজুহাতে তাকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার ভাই শেরেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সাদেকুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম খোকার ছেলে ।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, রাস্তার পাশেই ছোট্র একটি ইটের ঘরের মধ্যে ঠিক বনমানুষের মতোই খাঁচায় বন্দি হয়ে রয়েছে সাদেকুল ইসলাম। তার নিকটে গিয়ে দাঁড়াতেই হাতে থাকা বিড়ি নিয়ে আকুতি জানালেন একটু আগুন দিবেন ভাই? তার বিড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েই শুরু হয় ব্যক্তিগত কথা-বার্তা। তিনি জানিয়েছেন স্কুল জীবনে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পার্শ্ববতি ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া লেখাও করেছেন।
তাকে কেনো এভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে? বিষয়টি জানতে চাইলে নরম সুরে বললেন, বাড়ীতে আমাকে ঠিকমত ভাতও খেতে দেয়না, তাই অন্য মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভাত চেয়ে খাই, মাঝে মধ্যে বউয়ের খোঁজও করি, মানুষের সঙ্গে একটু দুষ্টমি করি তাই বন্দি করে রেখেছে আমাকে। জমি কতোটুকু আছে এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন মাত্র দেড় বিঘা। ছোট্র ইটের চার দেওয়ালের ঘরের মধ্যে একটি চৌকি, ওই ঘরের মধ্যেই রয়েছে তার প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারার সৌচাগার ও সিমেন্টের চারীর মধ্যে কিছু পানি। যা দিয়ে তাকে সেখানেই গোসল করতে হয়। সামনেই রয়েছে গ্রিলের দরজা। দরজার মাঝ বরাবর গ্রিল কাটা রয়েছে,ওই কাটা অংশের মধ্য দিয়েই খাবার দেওয়া হয়। তার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রতিবেশির বেশ কয়েকজন ছুটে আসেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলো কতোদিন থেকে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে? তারাও বললেন যে, প্রায় ৩ বছর ধরে এই অবস্থায় রাখা হয়েছে তাকে। প্রতিবেশি বাপ্পি, আছিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জানালেন, যদিও তার কথা বার্তা কিছুটা এলোমেলো রয়েছে। তবে তার আচরণে মানুষের কোনো রকম ক্ষতি হয় না। তবে ক্ষুধা লাগলে লোকজনের নিকট থেকে ভাত চেয়ে খায় সে। দীর্ঘ ৩ বছর ধরে বন্দি অবস্থায় থাকার কারণে কিছুটা পাগলের মতো আচরণ দেখা যাচ্ছে। তবে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে। তবে স্বার্থপর ভাই তাকে চিকিৎসা না করে পাগল সাজিয়ে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরে সাদেকুলের ভাই শেরেকুল ইসলামের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান যে, প্রায় ১৫ বছর ধরে সাদেকুল পাগল হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা করে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। মানষিক হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসকরা তাকে পাগল বলতে পারেনা। কিছুদিন আগে রাজশাহী চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তবে সাদেকুলের কথা ও আচরণে চিকিৎসকরা তাকে মানষিক রোগী বা পাগল বলতে একেবারেই নারাজ। তাকে বিয়েও দেওয়া হয়েছিল। এক ছেলে জন্ম নেওয়ার এক বছর পর প্রায় একযুগ পূর্বে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। মাথায় পাগলামো জাগলে লোকজনকে মারপিট করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। সে কারণে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
ব্র্যাক রাণীনগর শাখার মানবধিকার এবং আইন সহায়তা কর্মর্সচীর এইচ আর এল এস অফিসার শাহানা সুলতানা জানিয়েছেন, কয়েক দিন পূর্বে তিনি ওই গ্রামে একটি ট্রেনিংয়ের কাজে যান। সেখানে গিয়েই সাদেকুলের গৃহবন্দির ঘটনাটি তার নজরে আসে। তিনি বলেছেন, ওই গ্রামের অন্তত ৩০ জন লোকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন যে, কয়েক বছর পূর্বে সাদেকুল তার মায়ের মাথায় বাড়ি দিয়েছিল। সেই ক্ষোভে ও সম্পত্তি ভোগদখল করতেই বড় ভাই শেরেকুল তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। সাদেকুলের দ্বারা কেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন কথা গ্রামের কেও বলতে পারেনি। দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দি করে রাখার কারণে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। তাকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হলে দ্রতই সুস্থ্য হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এই এনজিও কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।