দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে কাশ্মীরে যেনো ‘ঝড়ের আগের শান্ত অবস্থা’ বিরাজ করছে। আর সে কারণে মনে করা হচ্ছে কাশ্মীরে নতুন করে আবার কী ঝড় আসতে চলেছে?
এ পর্যন্ত কাশ্মীরে বড় কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই থমথমে পরিবেশ নিয়ে অনেকেই নানান ধরণের মন্তব্য করছেন। কারও কারও মতে, কাশ্মীরের এই পরিবেশ যেনো ‘ঝড়ের আগের শান্ত অবস্থা’।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরসহ নানা স্থানে ঘুরে বিবিসি এই বিষয়ে এক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। যে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতশাসিত কাশ্মীরে এখন যে দম-আটকে-আসা অবরুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে, তার মধ্যে মনটাকে একটু হালকা করার নানা উপায় বের করে নিয়েছেন সেখানকার মানুষগুলো।
প্রধান শহর শ্রীনগরের পার্কগুলোতে দেখা গেছে লোকের ভিড় বেড়ে গেছে। ছবির মতো সুন্দর ডাল লেকের পার ধরে অনেকেই বসে গেছে মাছ ধরতে। আবার অনেকেই গাড়ি চালিয়ে শহরের নানা প্রান্তে যাচ্ছে, বন্ধু বান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। অনেককেই আবার দেখা গেছে রাস্তায় জটলা করতেও।
শ্রীনগর শহরে এখন অনেক জায়গা থেকেই নিরাপত্তা ব্যারিকেড ও কাঁটাতারের বেষ্টনি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্ল্যাকআউট বা রেশনে খাবার বিক্রিও নেই। দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য খুলছে ছোট ছোট বাজারগুলো।
মনে হতে পারে – ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতশাসিত কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নেওয়ার মাসখানেক পর মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটি যেনো ধীরে ধীরে এক ধরণের ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ ফিরে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পদক্ষেপে কাশ্মীর এবং জম্মুকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে জারি করা হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরকারি চাকুরীজীবি আসমা কুরেইশিও তার পরিবারকে নিয়ে এসেছেন পার্কে বেড়াতে! এতে কিছুর পরও বিবিসির সংবাদদাতা কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে বলে মনে করেন না।
একজন স্কুল শিক্ষক বলেছেন, আমাদের জীবনের পরিসর অনেক ছোট হয়ে গেছে, আমাদের মনটাই যেনো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। রাস্তায় বেরুলেই দেখা যায়, ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কড়া নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে এখন যেনো চেনাই দুষ্কর ব্যাপার।
পুরো রাজ্যই যেনো কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া, তাতে করে এটা প্রায় নিশ্চিত হয়েছে যে বড় আকারের কোনো সহিংস ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া আসছে, ‘স্বাভাবিক অবস্থার’ আবরণের নিচে টগবগ করে ফুটছে হতাশা ও ক্ষোভ।
আগামীতে কাশ্মীরে কি ঘটবে তা বলা সত্যিই কঠিন। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনেকেই মনে করেন, কাশ্মীরীরা সহিংসতায় এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে গেছে, একসময় তারা মি. মোদীর কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের অঙ্গীকারকেই স্বাগত জানাবে। তবে কাশ্মীরে খুব কম লোকই আছেন যে এই কথা সমর্থন করেন।
কাশ্মীরে সেই ১৯৯০ সালের পর হতে বিদ্রোহে নিহত হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার লোক। এই বিদ্রোহের কি এখন সমাপ্তির দিন শুরু হয়েছে? নাকি এখন আবারও নতুন করে আরেক দফা রক্তাক্ত বিদ্রোহ শুরু হতে চলেছে?
অতীতে দেখা গেছে যে, কাশ্মীরে কোনো একটা ঘটনা ঘটার বেশ কয়েক বছর বড় মাত্রার অভ্যুত্থান ঘটে। যেমন ১৯৬৩ সালের বিদ্রোহ ঘটেছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহর বরখাস্ত ও গ্রেফতারের ১০ বছর পর। ঠিক তেমনিভাবে, ১৯৮৯ সালের জঙ্গী তৎপরতা শুরু হয়েছিল বিতর্কিত স্থানীয় নির্বাচনের দু’বছর পর।
লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সে আন্তর্জাতিক ও তুলনামূলক রাজনীতির অধ্যাপক সুমন্ত বোস এই বিষয়ে বলেছেন, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির বিস্ফোরক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আগেকার ঘটনাগুলোর চাইতে অনেক বেশি। সত্যিই কি ঘটে তা শুধু সময়ই বলে দেবে।