দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে জাপানে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ জনে। প্রবল শক্তিশালী এই টাইফুনের কারণে দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত যেনো লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, শনিবার রাতে আঘাত হানা এই টাইফুনে ভূমিধস ও বন্যায় ধ্বংসস্তূপের নিচ হতে জীবিতদের উদ্ধারে মরিয়া হয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন উদ্ধারকারীরা। তবে কাদা-মাটি এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দেশটির আবহাওয়া সংস্থা বলেছে।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে যে, ১৯৫৮ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিসের তাণ্ডবে দেশটির প্রায় কয়েক লাখ বাড়িঘর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জাপানের জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে বলেছে যে, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে হাগিবিসের আঘাতের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রায় ১৫ জন নিখোঁজ। আর ঝড়ের তাণ্ডবে ২০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
ফিলিপাইনের তাতালোগ ভাষার শব্দ ‘হাগিবিস’; এর অর্থ হলো ‘গতি’। এনএইচকে বলেছে যে, আঘাত হেনে হাগিবিস দুর্বল হয়ে উপকূলীয় এলাকার দিকে চলে যায়। তবে তার পূর্বে চালানো তাণ্ডবে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার বাড়ি-ঘর পানির সংকটে পড়েছে। তাছাড়া ২৪ হাজার বাড়িঘরে কোনো ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। আরও হাজার হাজার বাড়িঘর বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় পড়েছে। তবে দেশটির উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
জাপানের রাজধানী টোকিওর উত্তরাঞ্চলের ফুকুশিমা সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। এনএইচকে বলছে, শুধুমাত্র ফুকুশিমায় হাগিবিসের তাণ্ডবে কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। সেখানে এখনও এক শিশু নিখোঁজ।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা বলছে যে, সোমবার সকাল হতে ক্রমশ শক্তি হারিয়ে নিরক্ষীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় হাগিবিস। এই ঝড় বর্তমানে জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এটি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মধ্য জাপানের নাগানো অঞ্চলটিতে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি-ঘরের দোতলা পর্যন্ত পানি উঠেছে।
জাপানের মন্ত্রিপরিষদের সচিব ইয়োশিহিদে সুগা বলেছেন, হাগিবিসের প্রভাবে দেশের ৩ লাখ ৭৬ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে প্রায় ১৪ হাজার পরিবারের মধ্যে। দেশটির মধ্য, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এখনও বন্ধ রয়েছে টেলিফোন এবং মোবাইল সেবা।
টাইফুনের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে পুলিশ, দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী, দমকল, উপকূলরক্ষী বাহিনীর ১ লাখ ১০ হাজার সদস্য। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর ২৭ হাজার সদস্যও মোতায়েন রয়েছে উদ্ধার কাজে।