দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘মহাকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যতোটুকু জানেন তার চেয়েও কম জানেন সাগর সম্পর্কে’- নাসার বিজ্ঞানীদের এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায় সাগর কতোটা রহস্যময় হতে পারে। আজ রয়েছে এক রহস্যঘেরা দুধের সাগরের গল্প!
বালুময় সৈকতে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত বা যে নীল দরিয়া আমরা সাধারণভাবে উপভোগ করি, তা শত সহস্র বছর ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে জটিল রহস্যের জাল হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ‘মিল্কি সি’ হলো ভারত মহাসাগরের এমনই একটি ক্ষুদ্র রহস্যময় অংশ।
এই সাগরটির অবস্থান মূলত সোমালিয়ার দক্ষিণ উপকূলে। আড়াইশো বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই সাগরের পানি অন্য সাগরের পানি হতে একেবারেই আলাদা ধরনের। বিশেষ করে রাতে মিল্কি সির পানি এক অপার্থিব রং ধারণ করে থাকে। পানির রঙের কারণেই কালের বিবর্তনে এই সাগরের নামের সঙ্গে মিল্কি অর্থাৎ দুধের ন্যায় সাদা শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মিল্কি সি ১৮৬৪ সালে প্রথম মানুষের নজরে আসে। ক্যাপটেন রাফায়েল সিমেস সিএসএস আলাবামা নামক একটি জাহাজে ওই সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। জাহাজের কেবিন হতে হঠাৎ তার দৃষ্টিগোচর হয় সাগরের পানির এই অদ্ভুত রং! এর নাবিক রাফায়েলের ভাষায়, হঠাৎ যেনো নীল পানি থেকে আলো ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। মনে হচ্ছে যেনো কোনো এক বরফ বিছানো মাঠের ভিতর দিয়ে আমরা চলেছি।
জানা যায়, রাফায়েলের কাছে যখন মিল্কি সি বরফ বিছানো মাঠ মনে হচ্ছিল ঠিক তখন অন্য ক্রুদের অবস্থাও তথৈবচ! কারণ হলো প্রাচীনকাল হতে আঠারো শতক পর্যন্ত সাগর ছিল নাবিকদের কাছে একেবারেই রহস্যঘেরা। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীকে সাগরের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিশ্বাস করে আসতো। যে কারণে মিল্কি সি তাদের কাছে মনে হয়েছিল অত্যন্ত ভীতিকর ও অশুভ একটি স্থান।
তবে দিন বদলের সঙ্গে সাগরও এখন নাবিকদের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মিল্কি সি’র রহস্য কিছুটা হলেও উন্মোচিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, পানির এই আলোকিত অবস্থা একশ্রেণীর ব্যাকটেরিয়ার কারসাজিতেই ঘটেছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, এই শ্রেণীর ব্যাকটেরিয়াকে বায়োলুমিনিসেন্স বলা হয়। মিল্কি সি’র ওপর থেকে তল অবধি এই বায়োলুমিনিসেন্স ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বিদ্যমান রয়েছে। কোটি কোটি বায়োলুমিনিসেন্সই সাগরের এই অংশে আলো ছড়িয়ে পানির রং দুধের মতো সাদা করে দিয়েছে।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে বায়োলুমিনিসেন্স গঠিত হয়ে থাকে? কেনোই বা সাগরের এই অংশে এতো বেশি বায়োলুমিনিসেন্স জড়ো হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন। কলারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন এমনই একজন অনুসন্ধানী বিজ্ঞানী। ১৯৯৫ সাল হতে তিনি মিল্কি সি’র ওপর গবেষণা করে আসছেন।
অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এই মিল্কি সি’র রহস্য ভেদ করতে পারিনি। মিল্কি সি’র পানি আলোকিত হওয়ার কারণ শনাক্ত করা গেলেও কেনো এই অংশে এতো বেশি বায়োলুমিনিসেন্স গঠিত হয় তা এখনও অজানা রয়ে গেছে।