দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর অনেক ইতিহাস আমাদের অজানা। সে রকম একটি নিদর্শন হলো নাগার্জুনসাগর বাঁধ। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর এবং তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার মাঝে এই বাঁধের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১২ বছর। এর পানির তলায় চাপা পড়ে রয়েছে প্রাচীন ভারতের বিশাল একটি নগরী।
১৯০৩ সালে কৃষ্ণা নদীতে এই বাঁধ তৈরির জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়াররা হায়দরাবাদের নিজামের নির্দেশে কাজ করেছিলেন।
১৯৫৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমলে। যে কাজ শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের পানি ধারণক্ষমতা ১১৪৭ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। সেচ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বহুমুখী দিকে বিস্তৃত এই বাঁধ দেশের সবুজ বিপ্লবের প্রধান কারিগর হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
তবে তার বিনিময়ে এই বাঁধ গ্রাস করেছে ইতিহাসের অমূল্য আকর। এর গভীরে ঘুমিয়ে রয়েছে প্রায় ১৭০০ বছরের প্রাচীন নগরী।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন বংশ পতনের পর সেই সময় ক্ষমতায় এসেছিল ইক্ষ্বাকু বংশ। বশিষ্ঠপুত্র চামতামুলা এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রামায়ণের ইক্ষ্বাকু বংশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কও নেই।
ঐতিহাসিকদের ধারণা, এই বংশ ইচ্ছা করেই এই উপাধিটি নিয়েছিল, রামচন্দ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের জন্যই। আজকের অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার গুন্টুর, কৃষ্ণা এবং নালগোন্ডা অঞ্চলে ২২৫ হতে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে বিস্তৃত হয়েছিল ইক্ষ্বাকু বংশের শাসন। বর্তমানে যেখানে নাগার্জুনসাগর হ্রদ, সেখানেই তাদের রাজধানী ছিল। কৃষ্ণা নদীর ডানতীরে তাদের ওই রাজধানীর প্রাচীন নাম ছিল বিজয়পুরী।
সুপরিকল্পিত এই শহরে এক সময় ছিল বিশাল রাজপ্রাসাদ, সাধারণ মানুষের বাড়ি, মন্দির, দোকান, বাজার, আস্তাবল, স্নানাগারসহ নাগরিক সভ্যতার অনেক অংশ। রোমান সাম্রাজ্যের মতো অ্যাম্ফিথিয়েটারও ছিল এই নগরীতেই।
ইতিহাসের অমূল্য এই সম্পদ নিয়ে কয়েক’শ বছর ধরে বিজয়পুরী চলে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। ঘনজঙ্গল ও পাহাড়ের আড়ালে কেও তার খোঁজ রাখতো না। পুনরাবিষ্কার হয় ব্রিটিশ শাসন আমলে ১৯২৬ সালে। ১৯২৭ হতে ১৯৩১ অবধি সেখানে অল্পবিস্তর খননকাজও করা হয়।
জানা যায়, ইতিহাসের খুব সামান্য কিছু নিদর্শন এএসআই রক্ষা করে রেখেছে নাগার্জুনকোণ্ডায়। নাগার্জুনসাগর হ্রদের ওপর একফালি দ্বীপই হলো এই নাগার্জুনকোণ্ডা। সেখানেই রাখা রয়েছে ইক্ষ্বাকু বংশের কিছু স্থাপত্যের নিদর্শন, যেটি ছিল অতীতে, তার তুলনায় সামান্যমাত্রই রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
নাগার্জুনকোণ্ডায় হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের সেসব নিদর্শন ছাড়াও আরও রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। সেখানে যা সংরক্ষিত হয়েছে, সেটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বাকি সব গ্রাস করে কৃষ্ণা নদীর জলরাশি।