দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ‘শয়তানের দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জনৈক ব্যক্তি! মোহাম্মাদ আল-শামরানি নামে এক যুবক টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেছেন।
গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পেনসাকোলা নৌঘাঁটির (নেভাল এয়ার স্টেশন) একটি শ্রেণীকক্ষে গোলাগুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত ও অন্তত ৮ জন আহত হন। এই ঘটনায় সৌদি সেনাবাহিনীর এক প্রশিক্ষণার্থী জড়িত ছিলেন বলে ৭ ডিসেম্বর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
হামলার পূর্বে মোহাম্মাদ আল-শামরানি নামে ওই যুবক টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শয়তানের দেশ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
জানা গেছে, আহত ৮ জনের মধ্যে স্থানীয় পুলিশের দুজন কর্মকর্তা ছিলেন। তারা ওই বন্দুকধারীকে আটকাতে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
দ্য সাইট ইনটেলিজেন্সের ধারণা মতে, ফ্লোরিডায় হামলা করার পূর্বে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার মোহাম্মাদ আল-শামরানি নামে ওই বন্দুকধারী মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে একটি লেখা প্রকাশও করেন।
যেখানে লেখা ছিল যে, ‘আমি প্রকৃতপক্ষে শয়তানের বিপক্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘শয়তানের দেশে’ পরিণত হয়েছে। আপনারা মার্কিন বলেই যে আমি আপনাদের বিপক্ষে তা কিন্তু নয়। আমি আপনাদেরকে ঘৃণা করি, কারণ হলো আপনারা প্রতিদিন শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো মানবজাতির বিরুদ্ধেই অপরাধ করছেন। শুধুমাত্র তা–ই নয়, এই অপরাধগুলোকে সমর্থনও করছেন, এমনকি আপনারা এসব করতে তহবিলও জোগাচ্ছেন।’
তবে এবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, এ কথাগুলো আদৌ ওই বন্দুকধারী লিখেছে কি না, তা এখন তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার।
এই বিষয়ে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ‘সৌদি সরকারের উচিত এই ঘটনার ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু একটা করা। আমি মনে করি যে, বন্দুকধারী যেহেতু সৌদি আরবের বাসিন্দা, যে কারণে তাদেরও কিছু দায় রয়েছে।’
অপরদিকে মার্কিন নৌ কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন টিমোথি কিনসেলা বলেছেন, বন্দুকধারী ওই ব্যক্তি বিমান চালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। নৌঘাঁটিতে তার মতো কয়েক’শ বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে। তবে কেবলমাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাই শুধু ঘাঁটিতে অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে পারেন। তাই এটি এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয় যে, ওই প্রশিক্ষণার্থী ঠিক কীভাবে বন্দুক নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছিলো।
অপরদিকে এই ঘটনার পর ৬ জন সৌদি বাসিন্দাকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ৩ জন পুরো হামলার ভিডিও করেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে সৌদি প্রেস এজেন্সির তথ্যমতে, এই ঘটনার পর সৌদি বাদশাহ সালমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টেলিফোন করেন। তিনি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এসব ঘৃণ্য অপরাধী সৌদির জনতাকে কখনও প্রতিনিধিত্ব করে না।
জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি বাদশাহ সালমান তাকে টেলিফোন দিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় আহত এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
ফ্লোরিডার মার্কিন নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে ওই হামলার এই ঘটনার দুদিন পূর্বেই গত ৪ ডিসেম্বর হাওয়াইয়ের পার্ল হারবার মার্কিন ঘাঁটিতে এক নাবিকের গুলিতে দুই নৌ-কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো।
বেজ ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, পেনসাকোলা নৌ-ঘাঁটিতে ১৬ হাজার সামরিক সদস্য এবং ৭ হাজার ৪শ’ বেসামরিক লোক কাজ করেন। তাদের অনেকের পরিবারও সেখানেই বাস করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পাইলটদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণগুলো মূলত এই ঘাঁটিতেই দেওয়া হয়ে থাকে। সে জন্য একে নৌবাহিনীর বিমান চালকদের ‘লালন কেন্দ্র’ও বলা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে শুধু সৌদির প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য এই ঘাঁটিতে বৈদেশিক সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী। বর্তমানে সৌদি আরব ছাড়া আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকরা এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন।