দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিমানে উঠার সময় মোবাইল ফোন বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। তবে অনেকেই বলেন বিমানে মোবাইল এরোপ্লেন মোডে না রাখলে নাকি সমস্যা হতে পারে। কী সেই সমস্যা?
এমন একটা সময় ছিল যখন কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে চড়া মানেই মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে। মোবাইল ফোন বন্ধ না রাখায় এবং এ নিয়ে বিমানের কর্মীদের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণে কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তিকে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও অনেক ঘটেছে।
সেই মোবাইল ফোন কিংবা এই জাতীয় অন্য ডিভাইস বন্ধ রাখার বদলে চলন্ত ফ্লাইটে ‘ফ্লাইট মোড’ কিংবা ‘এরোপ্লেন মোড’ চালু রাখার বাধ্যবাধকতার ঘটনা খুব বেশিদিন পূর্বের না। মূলত নিরাপত্তার খাতিরেই বিষয়টি নিয়ে এতোটা কড়াকড়ি করে থাকে এয়ারলাইন সেবার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো।
তবে আজকাল যারা উড়োজাহাজে করে ভ্রমণ করে থাকেন তারা হয়তো অনেকেই দেখেছেন যে, যাত্রীরা, এমনকি পাইলট ও ক্রুরাও স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ই-রিডার থেকে শুরু করে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করছেন।
তাহলে ঘটনাটা আসল কী? ফ্লাইটে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা কি আদৌ নিরাপদ? নাকি অন্য কিছু?
আসলে বাস্তবতা হলো, যাত্রীবাহী বিমান উদ্ভাবন মোবাইল ফোন আবিষ্কারের চেয়েও অনেক পুরনো দিনের কথা। সেই বিমানের প্রযুক্তির এখন ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও বিমানের কিছু মডেল ব্যবহৃত হচ্ছে যেগুলোর বয়স অত্যাধুনিক স্মার্ট ডিভাইসের উদ্ভাবনকালে চেয়েও বেশি। এই ডিভাইসগুলো আমরা মূলত হরহামেশাই ব্যবহার করে আসছি।
তাই এই নতুন প্রযুক্তিগুলো ফ্লাইট চালনার ক্ষেত্রে কোনো বাধা জটিলতার সৃষ্টি করে কিনা সেটি পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একে একে মোটামুটি সবগুলো আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন কোম্পানির ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যাচাই করে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, উড়োজাহাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কোনো বিপজ্জনক নয়।
তবে কিছুদিন আগেও অবশ্য বিষয়টি এমন ছিল না। ২০১১ সালেও বোয়িং ৭৩৭ জাতীয় কিছু উড়োজাহাজে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু মডেলের ফ্লাইট ডেকের স্ক্রিনে জটিলতা দেখা দিয়েছিল ফ্লাইটে মোবাইল ফোন চালু থাকার জন্য। তাই মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের কারণে উড়োজাহাজ চালনা প্রক্রিয়ায় যেনো কোনো ত্রুটি দেখা না দেয় সেজন্যই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে এতো কড়া আচরণ করে আসছিলেন।
তবে কড়াকড়ি করেও অনেক সময় লাভ হচ্ছিল না। কেনোনা ফ্লাইট নিরাপত্তা নির্ধারক, এয়ারলাইন কোম্পানি, উড়োজাহাজ নির্মাতাসহ উড়োজাহাজ শিল্প সংশ্লিষ্ট সবগুলো পক্ষই জানে, প্রত্যেকটি ফ্লাইটেই অন্তত কয়েক ডজন মোবাইল ডিভাইস চালু করা থাকে এরোপ্লেন মোড ছাড়া। ফ্লাইট-এরোপ্লেন মোড-মোবাইল ফোন কিংবা ডিভাইস কিন্তু কেও তার কিন্ডল ই-রিডারটা চালু রেখেছে বলে একটা প্লেন আকাশ থেকে টুপ করে পড়ে গেছে, এমনটি কখনও শোনা যায়নি। সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় যে, বেশিরভাগ ডিভাইসই অধিকাংশ ফ্লাইটেই কোনো রকম গণ্ডগোল সৃষ্টি করে না।
তবে বিমানযাত্রায় ‘অধিকাংশ’ বিষয়টি কখনই নিরাপদ হতে পারে না। কেনোনা যতোই নিষেধ করা হোক না কেনো, কেও হয়তো নিজের অজান্তেই তার স্মার্টফোনটির ফ্লাইট মোড চালু করতে ভুলে যান। কেও একজন হয়তো জানেনই না তার স্মার্টওয়াচ, হেডফোন কিংবা অন্য একটি ডিভাইসের এরোপ্লেন মোড রয়েছে যেটি চালু করা প্রয়োজন। অনেকেই আবার বিষয়টিকে পাত্তাই দেন না।
তাই নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিষয়টি নিয়ে বিপুল পরিমাণ গবেষণা চালানো হয়েছে দীর্ঘদিনে ধরেই। অবশেষে এয়ারলাইন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে, বিমানে থাকা অবস্থায় আপনার মোবাইল ফোনের ফ্লাইট মোড যে চালু রাখতেই হবে এমন কোনো বিষয় নয়।
তবে শেষ কথা হলো তারপরও বিমানে যখন আপনি সফর করছেন তখন তার নির্দেশনা মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করবে।