দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের সারণ জেলার একটি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরবরাহ করা দুপুরের খাবার খেয়ে ২২ শিক্ষার্থী মারা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। সারণ জেলার ধর্মসতি গন্ধমান গ্রামের ওই বিদ্যালয়ের আরো ২৫ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের পাটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসব শিশুদের বয়স ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল বুধবার রাজ্যের মধুবানি জেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আরো ৫০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তারা এখন আশঙ্কামুক্ত। ৭ শির্ক্ষার্থীকে এখনো স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, খাবারে সে টিকটিকির গন্ধ পেয়েছে।
২২ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এক জরুরি বৈঠক করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা রাস্তা অবরোধ করেন। তাঁরা পুলিশের অন্তত চারটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। ওই খাবার সরবরাহ করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ নারীরা। গ্রামের ওই বিদ্যালয়েও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সপরিবারে আত্মগোপন করেছেন বলে জানা গেছে।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পি কে শাহি জানান, প্রাথমিক পরীক্ষায় খাবারে বিষাক্ত ফসফরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এটা দুর্ঘটনা, নাকি কেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে খাবারে বিষাক্ত ফসফরাস মিশিয়েছে, সেটি খুঁজে বের করা হবে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও খাবারে বিষাক্ত ফসফরাসের কথাই বলছেন। শিশুদের শরীরে যে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকেই চিকিৎসকরা খাদ্যে বিষাক্ত অরগ্যানো ফসফরাসের উপস্থিতির ব্যাপারে জোরালো অভিমত দিয়েছেন। খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত দুষিত উদ্ভিজ্জ তেল ও বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে বলে জানান পাটনার এক চিকিৎসক। তবে ঊর্ধ্বতন শিক্ষা কর্মকর্তা অমরজিত সিনহা বলেন, ‘সবজি অথবা চালে ব্যবহৃত কীটনাশক থেকে এ বিষক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরবরাহ করা দুপুরের খাবারে বিষক্রিয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পাটনার এক সংবাদকর্মী অমরনাথ তিওয়ারি জানান, আগেও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এমনটা ঘটেছে। প্রসঙ্গত, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বাড়াতে বিনা মূল্যে দুপুরের খাবার সরবরাহ কার্যক্রম চালু রয়েছে ভারতজুড়ে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটির ১২ লাখ বিদ্যালয়ের প্রায় ১২ কোটি শিশু এই কার্যক্রমের আওতায়। তবে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা এসব খাবার অস্বাস্থ্যকর বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।