দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বব্যাপি এক মহা আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এটি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যা যা ঘটতে পারে সেই বিষয়গুলো জেনে নিন।
চীনে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আরও ১২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে হুবেই প্রদেশে ১১৬ জন মারা গেছেন। দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৮০। বিশ্বের মোট ২৬টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর এসেছে। এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮৩ জনে।
আজ জেনে নিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কী কী ঘটতে পারে?
এই ভাইরাসে শ্বাসকষ্টজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার ৫ হতে ৬ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার কোনো উপসর্গই দেখা যায় না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হেল্থ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান ডা. মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেছেন, ‘শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, সর্দি এবং জ্বর হয়, যা সবশেষে নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করে এবং একপর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায়। আক্রান্তদের মধ্যে আবার অনেকেরই মৃদু উপসর্গও দেখা যায়।’
ডা. মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেছেন, ‘আমরা ১৭ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছি, তাদের মধ্যে ৮২ শতাংশের উপসর্গ ছিল খুবই হালকা। ১৫ শতাংশের উপসর্গ তীব্র ও ৩ শতাংশের অবস্থা একেবারে সংকটাপন্ন।’
জ্বর, কাশি এবং নিউমোনিয়া
# ১৩৮ জনের ওপর পরিচালিত গত ৭ ফেব্রুয়ারি জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (জ্যামা) প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, চীনের উহানে আক্রান্ত ১৩৮ জনের অধিকাংশই জ্বর, অবসাদ এবং শুষ্ক কাশির কথা বলেছেন। এক তৃতীয়াংশ রোগী পেশি ব্যথা এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। অপর ১০ শতাংশের ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাবসহ অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিয়েছিলো।
# আক্রান্ত এসব রোগীর বয়স ২২ থেকে ৯২ বছরের মধ্যে, যাদের ১ হতে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে উহানে ঝোংনান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গ হালকাভাবে দেখা গেছে। সব রোগীরই একপর্যায়ে এসে নিউমোনিয়া দেখা দেয়।
# পরে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ব্যক্তি তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকেন, যাদের হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিতে হয়। বয়স্ক ও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগ থাকা ব্যক্তিদের অবস্থা সব সময় সংকটাপন্ন হয়।
# ১৩৮ জন রোগীর মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন। যে কারণে মৃত্যুর হারের পরিমাণ ৪.৩ শতাংশ, যা চীনের অন্যান্য অংশের চেয়েও বেশি।
# এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মোট সংখ্যার ২ শতাংশেরও কম মারা গেছে। তবে এই অনুপাত বদলেও যেতে পারে।
রোগটি শরীরে কীভাবে বেড়ে উঠে? তার একটি সময়রেখা
# জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণায় বলা হয়েছে যে, লক্ষণগুলো শুরুর ৫ দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। প্রায় ৮ দিনে শ্বাসকষ্টের তীব্র সমস্যা দেখা দিতে পারে।
# তবে কতোদিনের মধ্যে মৃত্যু হয় তার কোনো সময়সীমা গবেষণায় দেওয়া হয়নি বা জানানো হয়নি।
# গত ২৯ জানুয়ারি জার্নাল অব মেডিকেল ভাইরোলজিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয় যে, যারা মারা গিয়েছেন তারা আক্রান্ত হওয়ার গড় ১৪ দিনের মধ্যেই মারা গেছেন।
# ৩১ জানুয়ারি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে প্রভাব ফেলবে তা বলা হয়েছে।
# ওই গবেষণায় ৩৫ বছর বয়সী এক আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার প্রথম লক্ষণটি ছিল- শুকনো কাশি এবং তারপর জ্বর।
# আক্রান্তের তৃতীয় দিনে তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। ষষ্ঠ দিনে তার ডায়রিয়া হয় ও পেটে অস্বস্তিবোধ করেন। পরে তার বমি বমি ভাবও হয় এবং বমিও করেন। নবম দিনে তার নিউমোনিয়া দেখা দেয় এবং শ্বাস নিতে তার অসুবিধা হয়।
# দ্বাদশ দিনের মধ্যে তার অবস্থার উন্নতি ঘটেছিল এবং তার জ্বরও কমতে থাকে। তবে তার সর্দি আরও বেড়ে যায়। ১৪তম দিনে তার হালকা কাশি ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গই ছিল না। এই সমীক্ষাটি প্রকাশের সময় তিনি হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন।