দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একটি বেসরকারি সংস্থার কারণে দীর্ঘ ৪৭ পর এক বোন পেলো বড় বোন ও ছোট ভাইকে। জীবনসায়াহ্নে এসে ১০১ বছরের বোন বুন চেয়া এবং ছোট ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলেন ৯২ বছর বয়সী আরেক বোন বুন সেন।
এক আবেগঘন মুহূর্তে একে অপরের মুখটি দেখেছেন তারা। তাদের সর্বশেষ দেখা হয় ১৯৭৩ সালে। জানা যায়, ১৯৭০ এর দশকে কম্বোডিয়ায় খেমাররুজের সন্ত্রাসের রাজত্বের সময় পরিবার থেকে এরা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। খেমাররুজ ওই শাসনামলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিহত হন। সেই থেকে তাদের মধ্যে আর দেখাসাক্ষাৎ নেই।
বুন সেন ধরে নিয়েছিলেন যে, ওই সময় তার পরিবারের সবাই মারা গেছেন। ওই সময় অসংখ্য পরিবার ভেঙেচুরে গেছে। অনেক সন্তানকে পিতামাতার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে কমিউনিস্টরা পুরো দেশে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলো।
পলপটের শাসন আমলে স্বামী হারিয়েছেন বুন সেন। তারপর তিনি অবস্থান নেন রাজধানী নমপেনের ময়লার ভাগাড় বলে খ্যাত স্টাং মিনচে’তে। অনেক দিন সেখানে ময়লা আবর্জনার মধ্যে বর্জ্য পদার্থ খুঁজে বেরিয়েছেন তিনি। তা বিক্রি করে জীবন যাপন করেছেন। আবার শিশুদের যত্নও নিতেন।
তাদের বাড়ি ছিল কামপং চাম প্রদেশের একটি গ্রামে। সেই গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার স্বপ্নের কথা সব সময়ই তিনি বলে এসেছেন। তবে বয়স, হাঁটতে না পারার কারণে তারজন্য এই দীর্ঘ পদ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
২০০৪ সাল হতে বুন সেন’কে দেখাশোনা করতে থাকে এনজিও কম্বোডিয়ান চিলড্রেনস ফান্ড। তারাই বুন সেনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে। তারা অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে, বুন সেনের এক বোন এবং এক ভাই এখনও জীবিত রয়েছেন। তারা নিজেদের সেই গ্রামটিতেই বসবাস করছেন।
বড় বোন বুন চেয়া এবং ছোট ভাই (নাম জানা যায়নি)-এর সঙ্গে বুন সেনের দ্রুত সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতিও চলতে থাকে। অবশেষে গত সপ্তাহে তিন ভাইবোনের মিলন হয় প্রায় অর্ধশত বছর পর!
তারা হারিয়ে যান অতীতের সেই দিনগুলোতে, যখন সবাই এক সঙ্গে বসবাস করতেন। তখন অনেক স্মৃতি তাদের চোখে ভাসতে থাকে। এতো বছর পর ভাইবোনের মিলনমেলা পরিণত হয় যেনো এক হাসি-আনন্দের উৎসবে।
বুন সেন বলেন, আমি অনেক বছর আগেই গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিলাম। এরপর আর ফিরিনি। সব সময়ই ভাবতাম ভাই ও বোন মারা গেছে। এখন বড় বোনের হাতটা আমি ধরতে পারছি- এই পাওয়া যে আমার কাছে কি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আমি। আমার ছোটভাই প্রথমবার আমার হাত যখন স্পর্শ করলো আমি তখন শুধু যেনো অঝোরে কেঁদেছি।
বড় বোন বুন চেয়ার স্বামীকেও হত্যা করেছে খেমাররুজরা। তিনিও মনে করতেন, তার ছোটবোন বুন সেন মারা গেছেন। তিনি বলেন, পলপট আমাদের ১৩ জন আত্মীয়কেও হত্যা করেছে। আমি মনে করেছিলাম তার মধ্যে ছিল বুন সেন।
এখন একে অন্যকে কাছে পেয়ে যেনো আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছেন তারা। এখান থেকে ওখানে ছুটছেন অবিরত। ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজেদের গ্রাম, চেনা পরিবেশ কিভাবে এতোদিনে পাল্টে গেছে। বিবিসি অবলম্বনে।