দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধের অবসানে অবশেষে তালেবানদের সঙ্গে এক শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই ঐতিহাসিক তালেবান ও মার্কিন শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দোহার শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ এবং মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এই সময় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
অপরদিকে তালেবানদের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নেতত্বে ওই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয় গোষ্ঠীটির ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, আল-কায়েদা ও অন্যান্য চরমপন্থী কোনও গোষ্ঠীই তালেবান নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না। আফগান লাখ লাখ নাগরিকের আশা এই চুক্তির কারণে দেশের ভেতরে আমেরিকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধের অবসানের পথ সুগম হবে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মোতায়েনরত সৈন্যদের ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে নানা ধরনের জটিলতার শঙ্কায় চুক্তিটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তানে তালেবানরা কোনও হামলা না চালাতে রাজী। যে কারণে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের ন্যাটো মিত্ররা দেশটি থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর তালেবানের প্রতিনিধি মোহাম্মদ নাইম এই চুক্তিকে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে মূলত আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটলো।
এক বিবৃতিতে তালেবান বলেছে যে, আফগানিস্তানে দখলদারিত্বের অবসানে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আফগান ভূখণ্ড থেকে সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না বিশ্ব শক্তিগুলো।
চুক্তিতে পৌঁছানোর পর অঙ্গীকার রক্ষায় তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন যে, আমি জানি, এখন দেশটিতে বিজয় ঘোষণার একটি লোভ থাকবেই। তবে আফগানদের বিজয় তখনই অর্জন হবে; যখন তারা শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করতে পারবেন।
উল্লখ্য যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আফগান অপর জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার হামলার কয়েক সপ্তাহ পর দেশটিতে হামলা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ এই দেড় যুগের আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২ হাজার ৪০০ সেনা নিহত হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানে বর্তমানে ১৩ হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। চুক্তির পর তালেবান-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ এক বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা ৮ হাজার ৬০০ জনে কমিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে এই যৌথ ঘোষণার ১৩৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করা হবে।
এতে বলা হয়, আগামী ২৯ মে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অংশ নিয়ে তালেবান সদস্যদের ওপর আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাবে আফগান সরকার।
ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা পূর্বে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যে কোনও ধরনের হামলা চালানো হতে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাদের নির্দেশ দেয় তালেবান। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন যে, আমরা প্রত্যাশা করছি, শান্তি চুক্তি ও সমঝোতার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবেন।