দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতে অবশেষে কার্যকর করা হয়েছে নির্ভয়ার চার ধর্ষক ও খুনির মৃত্যুদণ্ড। ইতিপূর্বে বেশ কয়েক দফা তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর করার তারিখ পিছিয়েছিল।
সমাজে অপরাধ কমাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিদ্যমান। যখন থেকে মানুষ নিজেকে সামাজিক নিয়মে বেঁধেছে, তখন থেকেই সেই নিয়ম ভাঙার সর্বোচ্চ সাজাই হলো মৃত্যুদণ্ড। তবে সব দেশে একই নিয়মে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় না। শূলে চড়ানো, গিলোটিনে গর্দান নেওয়া হতে শুরু করে ইলেকট্রিক চেয়ার বা ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সময় ও দেশ ভেদে পদ্ধতি বদলে গিয়েছে মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতিও। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ প্রাণদণ্ডের সাজার বিলুপ্তি ঘটিয়েছে।
২০১৮ সালের এপ্রিলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির পরিসংখ্যান বলেছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের ১০৬টি (অর্ধেকের বেশি) দেশে মৃত্যুদণ্ড আইনত বন্ধ রয়েছে। আরও ৩৬টি দেশে মত্যুদণ্ড আইনত থাকলেও, তা কার্যকরীই হয় না। অর্থাৎ ১৪২টি (বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশের বেশি) দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যত নেই বলা যায়।
বিশ্বের ৫৬টি দেশে কম-বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি ম়ৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় চীনে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকার একমাত্র দেশ যেখানে এখনও মৃত্যুদণ্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু সব প্রদেশে নয়। ২০১৮ সালে আমেরিকায় ২৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে মোট ১৩ জনের।
অ্যামেনস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বিশ্বের ৫৪টি দেশে ২ হাজার ৫৩১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছিলো। শেষ পাওয়া হিসেব মতে, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে কমপক্ষে ১৯ হাজার ৩৩৬ জন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার প্রহর গুনছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বিশ্বে প্রাণদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ।
অ্যামনেস্টির রিপোর্ট মতে, চীনে ২০১৮ সালে অন্তত ১০০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু বরাবরই নিজেকে গোপনীয়তা ও রহস্যে মুড়ে রাখা চীন সরকারিভাবে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কোনও তথ্যই কখনও প্রকাশ করে না।
চীনকে বাদ দিয়ে ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে ৬৯০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর সিংহ ভাগ (৭৮ শতাংশ) হয়েছে এশিয়ার চার দেশ- ইরান, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম ও ইরাকে।
ইরান ও সৌদি আরব প্রতিবছর ১৫০ হতে ২৫০ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে থাকে । উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াতে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়ে থাকে মৃত্যুদণ্ড।
ভারতেও গুরুতর কোনও অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ভারতে ইতিপূর্বে শেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ২০১৫ সালে। ১৯৯৩-এর মুম্বাই হামলায় দোষী সাব্যস্ত ইয়াকুব মেমনকে দেওয়া হয় ফাঁসি।
এই দেশগুলির বাইরে এশিয়ায় এখনও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় জাপান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, বাহরিন, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
ইউরোপের ৩টি দেশ ছাড়া আর কোথাও মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এ অন্তর্ভুক্তির অন্যতম শর্তই হলো, সদস্য দেশ হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াই যাবে না। ইইউ-তে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১২ সালে লাতভিয়া এই সাজার অবলুপ্তি ঘটিয়েছে। ইউরোপে এখন শুধুমাত্র বেলারুশ, ডনেস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়াতে খাতা কলমে এখনও মৃত্যুদণ্ড রয়েছে। তবে সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে দেশটিতে এই চরম শাস্তি কার্যকর করা হয়। কাজাখস্তান ও তাজিকিস্তানে ব্যতিক্রমী অপরাধে এই সাজা দেওয়া হয়ে থাকে।
আফ্রিকায় বৎসোয়ানা, মিশর, সোমালিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান ও নাইজিরিয়াতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। শাদ ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড তুলে দিলেও, পরের বছর ১০ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছিলো।
উত্তর আমেরিকায় শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছে এই সাজা বলবৎ। তবে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সে দেশের ৫০টি প্রদেশের ২৯টিতে এই সাজার অস্বিত্ব বিদ্যমান।
মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় বেলিজ ও গায়ানাতেও রয়েছে মৃত্যুদণ্ড। ব্রাজিল, এল সালভাদোর, চিলি, গুয়াতেমালা ও পেরুতে ব্যতিক্রমী এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই সাজা দেওয়া হয়ে থাকে।
সমুদ্রে ঘেরা ক্রান্তীয় অঞ্চল ওশিয়ানিয়ায় শুধুমাত্র পাপুয়া নিউ গিনি ও টঙ্গোতে এখনও খাতায় কলমে প্রাণদণ্ডের আইন বিদ্যমান রয়েছে। তবে শেষ ৩ দশকে এই দুই দেশে কোনও চরম শাস্তি কার্যকরই করা হয়নি।