দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ লকডাউন করেও যেনো হিমশিম খাচ্ছে। সুইডেন সেখানে অফিস, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই চলছে। কিন্তু কেনো?
সুইডেনের পানশালা- রেস্তোরাঁ সবকিছুই খোলা রয়েছে। সবকিছু এভাবে খোলা রাখায় শুরু থেকেই আলোচনা সমালোচনার মুখে পড়েছিলো দেশটি। তবে বর্তমানে কেমন রয়েছে দেশটি? করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কেমন? এই নিয়ে দেশটিতে বসবাসরতদের প্রতিক্রিয়াই বা কী? সেই বিষয়গুলো দেখে নেওয়া যাক।
সুইডেনে ১৩ মে করোনায় নতুন আক্রান্ত হয় ৬৩৭ জন। মারা যায় ১৪৭ জন। এই নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত হলো ২,৭৯০৯ এবং মৃত্যুবরণ করেন ৩৪৬০ জন। এই পর্যন্ত ৪৯৭১ জন সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন।
চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বিপ্লব শাহনেওয়াজ বলেছেন, লকডাউন না করা সুইডেনের এই কৌশল নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনা সমালোচনা ছিলো তবে সুইডেন আস্তে আস্তে হার্ড ইমিউনিটির দিকেই যাচ্ছে। সুইডেনে যারা আক্রান্তদের বেশির ভাগই ছিলেন বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে। যে কারণে উত্তর ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে মৃত্যুহারও বেশি। সুইডেন লকডাউন না করেও প্রথমেই ভালো একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো। হাসপাতালগুলোতে ওয়ার্ড ও আসন সংখ্যাও বাড়িয়েছে। আইসিওর সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। এখনও হাসপাতালগুলোতে আইসিওসহ ওয়ার্ড ও বেড সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে।
সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনও খোলা রাখা হয়েছে। যারা জরুরি বিভাগে কাজ করেন তাদের কথা বিবেচনায় রেখে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং ডে কেয়ার সেন্টার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপর্যয়ের কোনো খবর এখনও আসেনি। এ পর্যন্ত কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি সুইডেনে।
রাজধানী স্টকহোমের একটি ডেকেয়ার সেন্টারে কাজ করা সোনিয়া আক্তার তিথি জানিয়েছেন, আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করছি। আগের থেকে আরও সতর্ক ও সচেতন রয়েছি । আমাদের স্বাস্থ্যবিধির ওপর আগের থেকে বেশি নজর রাখতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমাদের এখানে কোনো শিশুই আক্রান্ত হয়নি।
সুইডেনে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তার বেশির ভাগেরই ৭০ বছরের বেশি বয়স ও তাদের বেশির ভাগই বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করতেন।
সুইডেনের কৌশল নিয়ে ভিন্ন মতামত থাকলেও সুইডেন মূলত মজবুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। কোনো দেশই সঠিকভাবে বলতে পারবে না সঠিক সিদ্ধান্ত আসলে কোনটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এমন ভিন্ন কৌশল নেওয়া সম্ভব হয়েছে সুইডেনের পক্ষে। লকডাউন না করেও করোনা সংক্রমণ শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেলে সুইডেন হবে বিশ্বের জন্য এক অনন্য উদাহরণ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।