দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি করোনার হাত থেকে রেহাই পেতে ভ্যাকসিন আনতে চেষ্টা করছে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেকগুলো শক্তিশালী দেশ। তবে কম সময়ে ভ্যাকসিন তৈরি শুরু করেছে রাশিয়া। এতো দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির রহস্য আসলে কী?
বিভিন্ন দেশকে পেছনে ফেলে করোনা মোকাবেলার ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্ভাবনের দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। তবে কিভাবে এতো কম সময়ে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করলো পুতিনের দেশ? কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন বাজারে আনছে তারা? সেই রহস্য উদঘাটন করলো রাশিয়া।
রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী এটিই পৃথিবীর প্রথম এবং কার্যকরী করোনা ভ্যাকসিন। খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন যে, তাঁদের তৈরি ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপযোগী ও এর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। তবে পুতিনের সেই দাবি মানতে নারাজ বিশ্বের অনেক দেশ। তাঁদের প্রধান অভিযোগ হলো, রাশিয়ার এই করোনা ভ্যাকসিন এখনও মানব ট্রায়ালের সমস্ত ধাপ উত্তীর্ণই হয়নি। তাই এর কার্যকারিতা সংশয়াতীতও নয়। তবে এতো দ্রুত কিভাবে তৈরি করা গেছে এই ভ্যাকসিন?
এ সম্পর্কে রাশিয়া বলছে যে, ভ্যাকসিন তৈরিতে রুশ বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ভ্যাকসিন। সেই সংক্রান্ত তথ্য দিতে ইতিমধ্যে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করেছে রুশ প্রশাসন।
রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি হলো, যে পদ্ধতিতে ইবোলার ভ্যাকসিন তৈরি হয়, সেই পথে হেঁটেই আবিষ্কার হয়েছে এই করোনা ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ফাইভ’। ভ্যাকসিন তৈরিতে অ্যাডিনো ভাইরাসের ব্যবহারও করা হয়েছে। এই ভাইরাসের জিনের সঙ্গে অন্য ভাইরাসের প্রোটিন মিশিয়েই মূলত তৈরি হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত করোনার ভ্যাকসিন। অক্সফোর্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনের বিভিন্ন সংস্থাও ভ্যাকসিন তৈরিতে অ্যাডিনোভাইরাসই ব্যবহার করছে। তবে উন্নতমানের প্রযুক্তি রয়েছে শুধু রাশিয়ার হাতেই।
কিভাবে তৈরি হলো এই ভ্যাকসিন?
প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ভ্যাকসিন তৈরিতে অ্যাডিনোভাইরাসের ব্যবহার করা হবে। সেইমতোই অ্যাডিনো ভাইরাসের জিন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করা হয়। একইসঙ্গে অন্য ভাইরাসের প্রোটিন নিয়েও গবেষণা চালানো হয়। সেইমতো নতুন জিন এবং প্রোটিনের মিশ্রণে তৈরি করা হয় করোনার ভ্যাকসিন। রাশিয়ার দাবি হলো, এই প্রক্রিয়ায় কয়েক মাসেই মধ্যেই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, রাশিয়ার এই করোনা ভ্যাকসিনটির পৃষ্ঠপোষকতা করছে দেশটির সরাসরি বিনিয়োগবিষয়ক সংস্থা আরডিআইএফ। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কিরিল দিমিত্রিভ সিএনবিসিকে এই বিষয়ে বলেন, আমরা ভাগ্যবান যে করোনা ভাইরাস এমইআরএসের (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) খুব কাছাকাছি এসেছি। আমরা এমইআরএসের ওপর একটি ভ্যাকসিন (রেডি-টু-গো ভ্যাকসিন) প্রস্তুতও করে রেখেছিলাম।
তিনি আরও জানান, আমরা এমইআরএসের ওপর দুই বছর ধরে গবেষণা করে আসছি। তারপর করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ওই ভ্যাকসিনটিকেই আমরা কিছুটা পরিবর্তিত করেছি। এটিই হলো আসল গল্প, এতে কোনো রাজনীতি নেই। ভ্যাকসিন গবেষণার ক্ষেত্রে রাশিয়া সর্বদাই শীর্ষেই ছিল।
আরডিআইএফের প্রধান নির্বাহী কিরিল দিমিত্রিভ আরও বলেন, বিশ্বের কাছে আমাদের বক্তব্যটি হলো আমাদের কাছে এই প্রযুক্তিই (ভ্যাকসিন তৈরি প্রযুক্তি) রয়েছে। আমরা যদি আপনার (বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা) নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করি তাহলে নভেম্বর/ডিসেম্বরে আপনার দেশে এই ভ্যাকসিনটি পাওয়া যাবে। এই ভ্যাকসিন নিয়ে যারা খুব সন্দেহবাদী হয়েছেন তারা এটি পাবেন না।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।