দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাস হতে শিশুদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা খুঁজে পেয়েছেন বেইজিংয়ের একদল গবেষক। তারা বলেছেন, মায়ের বুকের দুধই শিশুদের করোনা হতে সুরক্ষা দেয়।
বেইজিংয়ের একদল গবেষক সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা কোষগুলোতে মায়ের দুধের প্রভাবও পরীক্ষা করেছেন। তারা বলেছেন যে, মায়ের দুধ শরীরে করোনা ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি এই ভাইরাসটি নির্মূলও করে। সম্প্রতি ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ হতে কোভিড সংক্রমিত মায়েদের সন্তানকেও বুকের দুধ পান করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক এই গবেষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের পক্ষেই জোরালো সমর্থন হাজির করেছে।
গবেষকরা দেখেন যে, শিশুদের মধ্যে অ্যান্টিবডি না থাকা সত্ত্বেও তাদের শরীরে রোগের জীবাণুর প্রবেশ এবং ছড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এই মায়ের দুধ। আরও দেখা যায় যে, মায়ের দুধ ছাগল ও এমনকি গরুর মতো অন্যান্য প্রাণীর দুধের চেয়েও বেশি কার্যকর।
বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব কেমিক্যাল টেকনোলজির অধ্যাপক টং ইগাংয় এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। গত শুক্রবার ‘বায়োরেক্সিভ ডট ওআরজি’ সাময়িকীতে ওই গবেষণার ফলাফলটি প্রকাশিত হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা প্রমাণ পেয়েছেন মায়ের বুকের দুধে অধিকাংশ জীবিত ভাইরাস মারা যায় আবার ওই ভাইরাসের প্রবেশও বাধাপ্রাপ্ত হয়।
গবেষকদল জানিয়েছেন যে, তাদের প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকেও সমর্থন করে। সন্দেহজনক কিংবা নিশ্চিতভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মায়েদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়া বহাল রাখার পরামর্শও রয়েছে ডব্লিউএইচওর।
এই গবেষণার জন্য মানুষের ফুসফুস এবং তন্ত্রের কোষকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে নিয়ে আসা হয়। এটি করতে গিয়ে সুস্থ কোষগুলোকে বুকের দুধের সঙ্গে মেশানোও হয় এবং তারপর দুধ পরিষ্কার করে কোষগুলোকে ভাইরাসের সংস্পর্শে নেওয়া হয়। এতে দেখা যায় যে, ভাইরাসটি বেশির ভাগ কোষে আবদ্ধ হতে কিংবা প্রবেশ করতে পারেনি। প্রবেশ করতে পারলেও ভাইরাসগুলো নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করতে মোটেও সক্ষম হয়নি।
গবেষণাটি বলছে যে, বুকের দুধ করোনা ভাইরাসের মতো অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দমনের মতো করোনা ভাইরাসও দমন করতে সক্ষম।
‘সার্স-কোভ-২ (কোষে) সংক্রমণ করতে পারে ও এই সংক্রমণ বুকের দুধ দিয়ে দমন করাও যেতে পারে। এই দুধে সার্স-কোভ-২ বিরোধী কার্যক্রমও রয়েছে,’ বলা হয়েছে ওই গবেষণায়।
একই গবেষকদল আগের এক গবেষণায় দেখেন যে, বুকের দুধ প্রাণীর কিডনি কোষে করোনা ভাইরাস সংক্রমণও প্রতিরোধ করে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।