দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইতিমধ্যেই অভিবাসন নিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন বাইডেন।
সংবাদ মাধ্যমদ সূত্রের খবরে জানা যায়, পারিবারিক অভিবাসনে ‘পাবলিক চার্জ’ নামে বিষয়টি যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ৬ লাখ ৭৫ হাজার পারিবারিক ভিসা প্রদান করে থাকে। এই ভিসাপ্রাপ্তিকে দুরূহ করার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। পুরোনো আইনের জের ধরেই মার্কিন সরকারের ভর্তুকির মুখে পড়বে-এমন লোকজনকে গ্রিন কার্ড না দেওয়ারও নির্দেশনা জারি করা হয়।
ওইসব আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যবিমা, ফুড স্ট্যাম্প, সরকারি আবাসনসুবিধার মতো সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ গ্রহণকারীদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি, গ্রিন কার্ড পাওয়া কিংবা নাগরিকত্ব পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ‘পাবলিক চার্জ’ নামে এই নির্দেশনা নিয়ে অভিবাসী গ্রুপগুলো আদালতে যাওয়ার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনা বহাল থাকে।
গত বছর মার্চ মাস থেকে করোনা মহামারির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছে। দেশের অধিকাংশ নাগরিককেই সরকারি নানা সামাজিক নিরাপত্তা–সহযোগিতা নিয়ে চলতে হচ্ছে। অভিবাসীদের মধ্যে এসব সুবিধা গ্রহণের হার সংগত কারণেই খুব বেশি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইন করে পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব ছিল যে, মেধাভিত্তিক অভিবাসন। নানা কালাকানুন করে শ্বেতাঙ্গবহুল দেশগুলো থেকে আমেরিকায় অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অনেক মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে বিতাড়িত হয়েছেন। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আসা লোকজনকে ‘ডিটেনশন’ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছে। নতুন নতুন ‘ডিটেনশন’ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো হতে আসা লোকজনের জন্যও সীমান্ত কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ করে অভিবাসন ঠেকানোর চেষ্টাও করেছেন। তার সময় সীমান্তে মা-বাবার সঙ্গে আসা অভিবাসী শিশুদের পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
ক্ষমতা গ্রহণ করে অভিবাসন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্টো যাত্রা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বাইডেন ক্ষমতায় এসেই পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন অভিবাসী শিশুদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য টাস্কফোর্সও গঠন করেছেন। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়ন সাময়িকভাবে স্থগিতও ঘোষণা করেছেন। পৃথক আদেশে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমেরিকায় আসা লোকজনের অভিবাসনপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার নির্দেশও দিয়েছেন।
প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬ লাখ ৭৫ হাজার পারিবারিক ভিসা দিয়ে থাকে। এই ভিসাপ্রাপ্তিকে দুরূহ করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা কড়াকড়ি আরোপ করেন। পুরোনো আইনের জের ধরে মার্কিন সরকারের ভর্তুকির মুখে পড়বে- এমন লোকজনকে গ্রিন কার্ড না দেওয়ারও নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে।
বাইডেন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্কিন অভিবাসনকে কঠিন করার কালাকানুন বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা উদ্যোগের মধ্যদিয়ে ব্যবস্থাটিকে কঠিন হতে আরও কঠিনতর করে তুলেছিলেন। এর মধ্যে পারিবারিক অভিবাসনের বিষয়টিই ছিলো অন্যতম। বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে পারিবারিক অভিবাসনে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষের অভিবাসন ঘটে আমেরিকায়।
‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভ্যালস’ (ডাকা) নামে কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ‘ডাকা’ কর্মসূচি আবার চালু করেছেন। অভিবাসী এই গ্রুপকে আমেরিকার নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন তিনি।
বাইডেন প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার আবেদন সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় বাইরের দেশে ভিন্নমত এবং ভিন্ন আদর্শের কারণে নিপীড়িত লোকজনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদন কঠিন হয়ে উঠেছিল। বাইডেন আমলে আশ্রয় আবেদনকে সহজ করার জন্য নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদন ভিন্নভাবে মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ হতে। সমস্যার উৎসের দিকে নজর দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করণ, নিপীড়ন বন্ধ করাসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আমেরিকাও উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়। যে কারণে বাইরের দেশ থেকে আমেরিকায় আশ্রয়ের চাপ কমবে বলেই মনে করছেন নতুন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা। ডেমোক্রেটিক পার্টির এমন অভিবাসন উদারতার কারণে রক্ষণশীলরা ইতিমধ্যে উৎকণ্ঠিত।
এই বিষয়ে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জেমস কমার বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের উদার অভিবাসননীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। সীমান্তে লোকজনের ভিড় বেড়ে গিয়ে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়াও নথিপত্রহীন অভিবাসীদের প্রতি অনুকম্পা ঘোষণার মাধ্যমে ভুল বার্তাও দেওয়া হবে। মার্কিন অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে খুব সহজেই পার পাওয়া যায় বলে লোকজন আইনভঙ্গ করতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন এই আইনপ্রণেতা।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল নামে সংগঠনের পরিচালক জরগে লায়ারি বলেছেন যে, অভিবাসন নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামা কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যর্থতা হতেই বাইডেনকে যাত্রা শুরু করতে হবে। অভিশংসন সংস্কার নিয়ে জর্জ বুশ হতে শুরু করে পরবর্তী তিন প্রেসিডেন্টই নিজেদের মতো সংস্কার করার কথা বলেছিলেন। তবে তারা চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আমেরিকার সমাজ বর্তমানে বেশি বিভক্ত। প্রেসিডেন্ট বাইডেন শেষ পর্যন্ত সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার আইনটি পাস করতে পারবেন কি না, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
তবে অভিবাসী গ্রুপগুলো এবং উদারনীতিকদের মধ্যে এই নিয়ে এখন আশাবাদ উঠেছে চরমে। তারা মনে করেন, অভিবাসীদের চারণভূমি আমেরিকার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অভিবাসনকে সহজ-মানবিক করার কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই। তাই জো বাইডেনের উদ্যোগ সকলে মিলে সফল করা উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ টুডে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।