দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনার টিকা নেওয়ার পরেও শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা অন্য কেও আক্রান্ত হতে পারেন। সম্প্রতি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কেও কেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে, এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা এমন তথ্য দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ হতে ৩ সপ্তাহ পর শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হতে থাকে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পর শরীরে সর্বোচ্চ এন্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কেও আক্রান্ত হলেও হতে পারেন, তবে এতে করে তার করোনা ভাইরাসের মৃদু উপসর্গ দেখা দেবে। তিনি হয়তো গুরুতর অসুস্থ হবেন না। তবে তার মাধ্যমে অন্য কেও আক্রান্ত হতে পারেন।
সম্প্রতি টিকা নেওয়ার ১২ দিন পর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন। তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।
এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে একটি সংবাদ মাধ্যমকে বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেছেন, টিকা নেওয়ার ১২ দিন পর শরীরে যে পূর্ণ এন্টিবডি ডেভেলপ করে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। মূলত ১৪ দিন পর থেকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে থাকে। সাধারণত ২৮ দিন সময় পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় এন্টিবডি তৈরি হয়। এই সময়ের আগে করোনায় আক্রান্তের একটা বিষয় হতেই পারে, আবার দ্বিতীয় আরেকটা কারণ হতে পারে সেটি হলো অন্য কোনো করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারেন, যে ভ্যারিয়েন্ট হয়তো কোনোভাবেই এই ভ্যাকসিনকে বাইপাস করে গেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা এবং সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের অন্ততপক্ষে তিন সপ্তাহ পর শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হতে থাকে। শরীরে সর্বোচ্চ এন্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ারও ১৪ দিন পর। কথা হচ্ছে টিকা নেওয়ার আগে এবং পরে আক্রান্ত হলে করোনা ভাইরাসের নমুনা শরীরে পাওয়া যেতেই পারে। আবার শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়ার পর যদি কেও আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তার শরীরে করোনা ভাইরাসের মৃদু লক্ষণ, সামান্য জ্বর ও কাশিও হতে পারে।
তিনি বলেছেন, ‘তবে বলা যায় যে, ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই ভাইরাসে তিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ হবেন না। তবে তার মাধ্যমে অন্য কেও আক্রান্তও হতে পারেন। অন্য কেও আক্রান্ত হলে তার যদি করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকে, তাহলে তিনি আবার গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন। সেজন্যই আমরা সব সময় বলছি যে, টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন যে, সমস্ত ভ্যাকসিনই সিভিয়ার ডিজিস প্রতিরোধে সক্ষম। অন্য দেশে গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন সিভিয়ার ডিজিসকেও আটকাতে সক্ষম। এটি মূলত প্রথম জেনারেশনের ভ্যাকসিন। পরবর্তীসময় ভ্যাকসিনের যে সংস্করণ আসবে, সেগুলো আরও বেশি করে কার্যকর হবে। সেই টিকা হয়তো করোনা ভাইরাসের ট্রান্সমিশন রোধ করতেও সক্ষম হবে।
ভ্যাকসিন কার্যক্রমের পাশাপাশি গবেষণার বিষয়েও আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও গবেষকরা। এই বিষয়ে তারা বলেছেন, আরটি পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক শতকরা ৫ হতে ১০ শতাংশ নমুনা সিকোয়েন্সিং করে দেখা প্রয়োজন। ভাইরাসের নমুনা শুধু সিকোয়েন্সিং করে মিউটেশন রয়েছে কিনা, সেটি দেখলেই হবে না, সেইসঙ্গে এই ভাইরাসের সঙ্গে ডিজিস এবং ভ্যাকসিনের সম্পর্ক কী সেটিও আমাদেরকে সিকোয়েন্সিং করে দেখতে হবে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।