দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের একজন নারীকে এবার প্রকাশ্যে খবর পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে দেশের বেসরকারী টিভি চ্যানেল বৈশাখী টেলিভিশন।
বৈশাখী টেলিভিশনের এই উদ্যোগকে দেশের আপামর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের আমাদের সমাজে ছোট চোখে দেখা হয়। অথচ তাদের জন্মের জন্য তারা কোনোভাবেই দায়ি নন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় পুরুষ বা নারী না হয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের সমাজে এইসব তৃতীয় লিঙ্গ বা যাদের আমরা হিজরা বলে থাকি তারাও আমাদের মতোই মানুষ। অথচ হিজরা হয়ে জন্ম নেওয়ার কারণে আমাদের সমাজে তাদের ঠাই হয় না। জন্মের পরই এমন সন্তানদের বাবা-মা ত্যাগ করেন। হয়তো রাস্তায় ফেলে আসেন অথবা কোনো দূরবর্তী স্থানে তাদের ফেলে দিয়ে আসেন। অথচ মানুষ হিসেবে কী সেটি আমাদের করাটা ঠিক হয়? কখনও এমন হতে পারে না। একজন মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েও এইসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা অবহেলিতভাবেই টিকে থাকেন। মানুষের কাছে ভিক্ষা করে তাদের চলতে হয়। আমরা বাসে উঠলে এমন অনেককেই দেখতে পায়।
তবে এখন মানুষ অনেক সচেতন। তাই অনেকেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হলেও তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে সাধারণ ছেলে বা মেয়ের মতো মানুষ করে তুলছেন। যেমন ঘটেছে তাসনুভা আনান শিশিরের ক্ষেত্রে। তিনি বৈশাখী টিভির বদৌলতে দেশে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে খবর পাঠক হয়েছেন।
তাসনুভা আনান শিশির এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আমার ছেলে বেলা কেটেছে এক বিদ্ধস্ত অবস্থায়। আমি আমার নিজের নামও প্রকাশ করতে পারতাম না। একটা ট্রমার মধ্যে দিন কাটাতে হতো। আর এখনকার অনুভূতি হলো, বাঁধ বাঙ্গা আনন্দ। যার খুশিতে আমি অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম। একটা খুশি জোয়ার যেটাকে বলে। এই ধারাটা এই কমিনিটির জন্য একটা জোয়ার নিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। তাসনুভারা যে অনেক কিছু পারে শিশিরাযে সাপোর্ট পেলে অনেক কিছু করতে পারে তাদের জন্য যে একটা খেলার মাঠ দরকার বৈশাখী সেই জায়গাটা প্রমাণ করলো।
১৯৯১ সালের ১৬ জুন বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তাসনুভা আনান শিশির। জন্মের পরই আর চার-পাচঁটা ছেলে মেয়ের মতো বেড়ে উঠেনি তাসনুভার শৈশবকাল। তখন থেকেই মানুষের হাস্য-রসিকতার শিকার হতে হয় তাকে। সে কারণে অনেকটাই বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি।
পড়াশোনা করতে গিয়েও অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরোতে হয়েছে তাকে। স্কুলে গেলেই নানা মন্তব্য করা হতো তাকে নিয়ে। এমনকি তাকে হ্যারেজমেন্টও করা হয়েছে বহুবার। সে কারণে তার পড়ালেখায় বেশ ক্ষতিও হয়েছিল বলা জানিয়েছেন তাসনুভা।
তাসনুভা বলেছেন, স্কুলে আর সবার মতো আমার কোনো বন্ধু ছিল না। টিফিনে সবার সঙ্গে বসে খেতে পারতাম না। একসঙ্গে খেলতেও পারতাম না। তখন আমি ভাবতাম কিভাবে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করবো। কারণ সমাজে আমাকে কেওই যেনো সহজভাবে নিচ্ছিল না।
নানা প্রতিকুলতা সত্বেও তাসনুভা আনান নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। একইসঙ্গে ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ হতে পাবলিক হেলথ বিষয়ে আরও এক বছরের জন্য মাস্টার্স করেন তিনি।
তাসনুভা চান অন্য ট্রান্সজেন্ডাররাও তার মতো যোগ্যতা অর্জন করুক। তারাও ভালো পেশা বেছে নিক। অন্য ট্রান্সবোনদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তাসনুভা বলেছেন, তাদের সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ; যোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই তারা যেনো আপনার জেন্ডারটা না দেখে গুণটাই দেখেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাওয়া। কারণ সবাই যোগ্যতা দেখেন।
উল্লেখ্য, গতকাল (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন দুপুর ও বিকেল ৪টায় আরেকটি দুটি বুলেটিন সরাসরি বৈশাখী টিভিতে এই ট্রান্সজেন্ডার নারী তাসনুভা আনান শিশির প্রথম খবর পাঠ করে আলোচনায় উঠে আসেন। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে এমন সুযোগ দেওয়ার কারণে সবাই বৈশাখী টিভিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
দেখুন ভিডিওটি
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।