দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে শিশুরা। অনেক নবজাতক জন্মের পর হতেই বাড়িতে বন্দী। আজ করোনার এই সময় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে করণীয় জেনে নিন।
এমন অনেক শিশু রয়েছে, যাদের শুধু বাবা-মা বা গৃহকর্মীর বাইরের কারও সঙ্গেই সাক্ষাৎ হচ্ছে না। করোনার এই সময় কোমলমতি শিশুদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখাও হচ্ছে না। বাড়ির বাইরেও যেতে পারছে না কেও। বাইরের পরিবেশও তাদের কাছে যেনো এক অচেনা। সে কারণে নিজের আত্মীয় স্বজনকে দেখলেও অনেক সময় শিশু ভয় পাচ্ছে কিংবা নিজেকে গুটিয়ে রাখছে। এমন অবস্থায় বাইরের আলো বাতাসসহ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা এবং দফায় দফায় লকডাউনে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে শিশুরা। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিশু-কিশোরদের মন খারাপের দিন আরও যেনো দীর্ঘই হচ্ছে। কিছু সময় অনলাইনে ক্লাস হলেও স্কুলের পরিবেশ এবং বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গ না পাওয়ায় বিষন্নতা সৃষ্টি হচ্ছে শিশুদের মনে। দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে তারা একঘেয়েমি জীবনে অনেকটাই বিরক্ত হয়ে পড়ছে। পড়াশোনার আগ্রহও কমে যাচ্ছে। এতে করে রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। আচরণগত সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে শিশুদের মধ্যে।
এই বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দীর্ঘসময় গৃহবন্দী থাকার কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারা ক্রমেই আত্মকেন্দ্রীক হয়ে উঠছে। অনেক শিশুর মেজাজও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। খাওয়া, ঘুম, টিভি দেখা গোসল সব কিছুর রুটিনই যেনো এলোমেলো হয়ে পড়ছে।
এই বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন:
# করোনা সংকটের কারণে ঘরবন্দী এই সময় সন্তানদের গড়ে তুলতে একটু চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিতে হবে।
# এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের কৌশলী আচরণও করতে হবে।
# ঘরের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চা এবং সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে তাদের।
# শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে।
# করোনা সংকটের এই সময় নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সন্তানদের আরও অভ্যস্ত করাতে হবে।
# সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি করে যত্নবান হতে হবে।
এই বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিশু-কিশোরকেই অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। অনেক শিশু ক্লাসের বাইরে মোবাইল নিয়ে থাকছেন। সে কারণে শিশুদের কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারে আসক্তি আরও বাড়ছে। করোনার এই সময় শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে।
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেছেন, শিশুর ভালোলাগা মন্দলাগাকে আপনাকেই বুঝতে হবে। বাবা মাকে তাদের মনোজগতটার সঙ্গেও মিশে যেতে হবে। এই সময় শিশুদের পড়াশোনার জন্য মোটেও চাপ দেওয়া যাবে না। মারধরও করা যাবে না কোনো অবস্থাতেই। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে শিশুদের সৃজনশীল কাজেই বেশ করে ব্যস্ত রাখতে হবে। ঘরের মধ্যেই নাচ-গান, খেলাধুলা এবং ঘরের কাজে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে করে করে তাদের একঘেয়েমি ভাবটা দূর হয়ে যাবে। গল্পের বই পড়ারও উৎসাহ দিতে হবে। তাদের শারীরিক এবং মানসিক কোনো চাপ দেওয়া যাবে না। সব সময় তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।