দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রক্তদান করলে শুধু যে অপরের উপকার হয়, তা কিন্তু নয়। আপনি নিজেও উপকার পাবেন। প্রথমত মানসিক শান্তি পাবেন। তবে রক্ত দানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাথতে হবে।
আপনার রক্তে জীবন ফিরে পারেন কেও- একবার ভাবুন এটা কতোটা পরোপকারী কাজ! তাই অনেকেই রক্তদানে উৎসাহী হন। তবে যখন-তখন একজন মানুষ রক্ত দিতে পারেন না। রক্ত দেওয়ার আগে কিছু বিষয় রয়েছে যা অবশ্যই মানতে হবে।
সুস্থ, সবল, নিরোগ প্রাপ্ত বয়ষ্ক একজন ব্যক্তি প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিতে পারেন। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রক্তদানের কারণে রক্তদাতার শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। রক্তের লোহিত কণিকার আয়ু হলো ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্ত দিন বা নাই দিন ১২০ দিন পর লোহিত কণিকা আপনা আপনিই মরে যাবে। সেখানে জায়গা করে নেবে নতুন লোহিত কণিকা। রক্তের এই উপাদানগুলোর আয়ুষ্কাল আরও কম।
একজন মানুষের দেহের মোট ওজনের ৮ ভাগই রক্ত। রক্তের ৫৫ ভাগই হলো রক্তরস কিংবা প্লাজমা, যার ৯০ ভাগই হলো পানি। সুতরাং আপনি যে রক্ত দেন তার ওজন এক পাউন্ডের কম হলেও আসলে এর অর্ধেকটাই পানি। সে জন্যেই রক্ত দেওয়ার আগে ও পরে চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বা লিকুইড খেতে বলেন (অন্তত ৫০০ মিলিলিটার)। তাহলেই রক্ত দেওয়ার পর ক্ষয়টা দ্রুত পুষিয়ে যায়।
প্রোটিন ও শর্করাজাতীয় খাবার
বেশি পরিমাণ প্রোটিন ও শর্করা রয়েছে এমন খাবার এবং পানীয় খেতে পারেন। যেমন- জুস বা শরবত। অধিকাংশ ল্যাবে রক্তদানের পরই ডোনারদের গ্লুকোজ দিয়ে থাকে।
ধূমপান ও মদ্যপান
রক্তদানের পরপরই ধূমপান বা মদ্যপান করবেন না।
ব্যায়াম ও শারীরিক কসরত
রক্তদানের পরপরই যে কোনো ধরনের ব্যায়াম যেমন, জিমন্যাসিয়াম ও নাচ কিংবা দৌঁড়ের মতো শারীরিক কসরতের কোনো কাজ করবেন না।
জ্ঞান হারিয়ে ফেললে
রক্তদানের পর কাওকে কাওকে অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখা যায়। এটা হয় সাধারণত লো ব্লাড প্রেশার যাদের রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। ঘাড়ের ধমনীতে ব্যারোরিসিপটর নামে বিশেষ একধরনের নার্ভসেলের কারণে রক্ত দেওয়ার পর পরই দেহে খবর হয়ে যায় যে, তার রক্তচাপ কমে গেছে। এই শূন্যতা পূরণের জন্যে রক্তকণিকাগুলো তখন সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং রক্তচাপকে স্বাভাবিক করার চেষ্টাও করে। অনেক সময় দেখা যায়, রক্ত দেওয়ার পর পরই কেও যদি দ্রুত উঠে দাঁড়ান বা হাঁটতে শুরু করেন, তখন আকস্মিক রক্তচাপ নেমে যাওয়ার কারণে শরীরটাকে হালকা মনে হতে পারে, অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থা এড়ানোর জন্যে যা করতে পারেন তা হলো, রক্ত দেওয়ার পর পরই না উঠে কিছুক্ষণ সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এই সময় মাথার নিচে যেন কোনো বালিশ কিংবা উঁচু কিছু না থাকে। কারণ হলো মাথাটাকে রাখতে হবে হার্টের লেভেলে, যাতে করে হার্ট থেকে ব্রেনে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত যেতে পারে। বিছানা থেকে নামার আগে কিছুক্ষণ পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে থাকতে পারেন। তারপরও কোনো অসুবিধা হলে, সেটা দেখার জন্যে আমাদের উপস্থিত চিকিৎসকগণতো রয়েছেই।
চার মাস অপেক্ষা কেনো?
একবার রক্ত দেওয়ার পর পরবর্তী চার মাস পর আপনি আবার রক্ত দিতে পারবেন না। এই সময়ের মধ্যে সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আগের অবস্থাতে ফিরে যায়। প্রশ্ন হলো, কেনো এই সময়টি লাগে? আসলে শ্বেতকণিকা কিংবা অনুচক্রিকার ক্ষয়টা পূরণ হয়ে গেলেও লোহিতকণিকার ক্ষয় পূরণ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। লোহিত কণিকার সঙ্গে সুস্থতার একটা সম্পর্ক রয়েছে। কারণ লোহিত কণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন অণু, যার প্রধান কাজই হলো পুরোদেহে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাওয়া। হিমোগ্লোবিনে থাকে আয়রণ, রক্ত দেওয়ার সময় যা কিছুটা হারিয়ে ফেলে। এটা পূরণ করার জন্যে তখন একদিকে দেহের লৌহভাণ্ডার বেশি বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, অপরদিকে খাবার ও পানীয় থেকে তৈরি হতে থাকে বেশি বেশি আয়রণ। তাই এই সময় নিতে হয়।
# ডা. সাজেদুল ইসলাম নাহিম -এর লেখা অবলম্বনে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।