হাসানুজ্জামান ॥ বিশ বছর পর আফগানিস্তানে আবারও মুসলিম মৌলবাদী দল তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে। যে কোন মুহূর্তে তারা সরকার গঠন করবে।
ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়েছে। তার সাথে সাথে তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট আমানুল্লাহ সালেহ একই পথ অনুসরণ করেছে। এদিকে আফগান সরকারের সমর্থন পুষ্ঠ হাজার হাজার মানুষ এখন দেশ ছেড়ে আমেরিকায় বা অন্য কোন নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে আফগানিস্থান হামিদ কারজাই বিমান বন্দরে অবস্থান করছে। এ দিকে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে নিজ নিজ দেশে চলে গেছে, আবার অনেকেই চলে যাওয়ার পথে।
২০২০ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহা’য় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’এর মধ্যস্ততায় তালেবান, আফগান সরকারের মাঝে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় আমেরিকা তাদের সৈন্যবাহিনী অফগানিস্তান থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নিতে থাকে। এই সুযোগে পাহাড়-পর্বতে লুকিয়ে থাকা তালেবানরা দ্বিগুণ শক্তিতে শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের মোকাবেলায় সরকারী বাহিনী প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। ফলে ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে বেশির ভাগ প্রদেশ খুব সহজেই তালেবানরা দখল করে নেয়। গেল শনিবার তালেবানরা আফগানিস্থানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করার মধ্যদিয়ে পুরো দেশ তাদের দখলে চলে আসে। আফগান সরকার শতচেষ্ঠা করেও তালেবানদের দূর্বার গতিকে থামাতে পারেনি। অবশেষে একদিন পরেই রবিবার সন্ধ্যায় পালিয়ে গেছে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি।
আমেরিকার টু’ইন টাওয়ারে হামলার পর আমেরিকা নড়ে চড়ে বসে। তারা এই ঘটনার জন্য মুসলিম সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আল কায়েদাকে দোষারোপ করে। তাদের অভিযোগ তালেবানদের সহযোগিতায় আলকায়েদার সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানের পাহাড়ে-পর্বতে লুকিয়ে আছে। আমেরিকা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তালেবানদের বিরুদ্ধে। তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ২০০১ সালে তালেবান সরকারকে উচ্ছেদ করে। সেখানে তাদের পছন্দের সরকারকে বসায়। এদিকে তালেবান যোদ্ধারা শহর ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্জলের পাহাড়ে-পর্বতের গুহায় গিয়ে অবস্থান নেয়। আমেরিকার প্রশিক্ষিত সৈনিকরা দীর্ঘ বিশ বছর ধরে তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। এতে তাদের যেমন কয়েকহাজার সৈন্য মারা গেছে আহত হয়েছে সস্রাধিক। অপরদিকে তালেবানদের অনেক যোদ্ধা মারা গেছে। মোট কথা উভয়পক্ষের বহু সৈন্য হতাহত হয়েছে।
এই অবস্থায় আমেরিকা তাদের সৈন্য আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নিলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টিয়ে যায়। আফগানিস্তান দ্রুত তালেবানদের দখলে চলে আসে। ক্ষমতায় এসেই তারা এখন আফগানিস্তানে মুসলিম শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমেরিকা অবশ্য আগে থেকেই শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে রয়েছে। তালেবানরা ইতিমধ্যে নারীদের প্রতি সন্মান দেখানোসহ অন্যদের সমালোচনাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে। তাদের সরকারের পত্রিকাসহ কেউ সমালোচনা করলে সেটার জন্য তারা এখন খড়গহস্ত হবে না। মেয়েরা চাকুরি করতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে। তাদের এই বক্তব্যগুলো আগামীর দিনগুলোতে কতটুকু কার্যকর করতে পারবে তা আগামীই বলে দিবে। তবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রদেশে দেখা গেছে চাকুরিরত মেয়েদেরকে চাকুরিস্থলে আসতে বারণ করেছে তালেবানরা। রাজধানী কাবুলের ছোট-বড় দেওয়ালে যেখানে মেয়েদের ছবি ছিল সেই সকল ছবি সাদা রঙ দিয়ে মুছে ফেলা শুরু করেছে। এখন আফগানিস্তানে সবচেয়ে আতঙ্কে আছে নারীরা। তারা পুনরায় বোরকা পরতে শুরু করেছে। শপিংমলের বোরকার দোকানগুলোতে বোরকা কিনার ধুম পড়ে গেছে। ফলে বোরকার দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। তালেবানরা যদি ১৯৯৬ সালের শাসনের দিকে ফিরে যায় তবে সেখানে নারীদের কোন অধিকার থাকবে বলে মনে হয় না। তবে কেউ কেউ বলছেন, তালেবানরা বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে এবার নিজেদের কিছুটা হলেও খাপ খাইয়ে চলতে চায়। বিশেষ করে তারা কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানে আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে না। তবে সময়ই বলে দিবে আসলে আফগানিস্তানে কি ঘটতে যাচ্ছে।
# লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।
Bengali 
English