দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীঘ্রই চালু হচ্ছে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তর পদ্ধতি। বর্তমানে তহবিল স্থানান্তরে অন্তত একদিন অপেক্ষা করতে হয়। এই পদ্ধতি চালু হলে তাৎক্ষণিক অর্থ স্থানান্তরিত হবে।
অনলাইন সূত্র বলেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যকার তহবিল স্থানান্তর তাৎক্ষণিক সম্পন্ন করতে নতুন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বা আরটিজিএস’ নামের নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তা এবং বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে এডিবি অনুদানের অর্থ ছাড় করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই নিরাপদ এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। বিশ্বব্যাংক শতাধিক দেশে আরটিজিএস বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।
সূত্র জানায়, আরটিজিএস বাস্তবায়নে যে অর্থ ব্যয় হবে তার মধ্যে এডিবি দিয়েছে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। এডিবির অর্থ প্রকল্পের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উন্নয়ন সংশিস্নষ্ট কাজে ব্যয় করা হবে। আর বিশ্বব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেবে। নতুন এ পদ্ধতি পরিচালনার জন্য যে ব্যয় হবে, তা নির্বাহ করা হবে ব্যাংকগুলো থেকে। তবে সেই খরচ খুব কম বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের দায়িত্ব্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার বলেন, আন্তঃব্যাংক পেমেন্ট অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে এ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে সব ধরনের হাই ভ্যালু পেমেন্ট সহজ প্রক্রিয়ায় অল্প সময়ে সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) এবং বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) চালু করেছে। তবে বিইএফটিএন ও বিএসিএইচের সঙ্গে আরটিজিএসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিইএফটিএনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর মধ্যকার ক্লিয়ারিং একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর হয়। এই পদ্ধতিতে রিয়েল টাইম অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট হয় না। আরটিজিএসের মাধ্যমে ওয়ান টু ওয়ান ভিত্তিতে লেনদেন হয়। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয় ক্লিয়ারিং হাউসে দুটি ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং করতে নেটিং করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তারা জানান, আরটিজিএস পদ্ধতি চালু হলে যে কোনো ধরনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনলাইনে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাই ভ্যালু চেক তথা পাঁচ লাখ টাকা থেকে ওপরের যে কোনো পরিমাণের অর্থ স্থানান্তর করা যাবে। সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, সেকেন্ডারি বন্ড বেচা-কেনা, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের (কলমানি) লেনদেনগুলো অল্প সময়ে ও ঝুঁকিমুক্তভাবে সম্পন্ন হবে। এটি হবে এমন একটি পদ্ধতি, যা ব্যবহার করে কোনো ব্যাংকের নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণে ঘাটতি দেখা দিলে অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেটানো যাবে। এক্ষেত্রে যে ব্যাংকে সিআরআর ঘাটতি থাকবে উদ্বৃত্ত ব্যাংক থেকে তার ঘাটতি মেটানো হবে। এটি ঘাটতি ব্যাংককে উদ্বৃত্ত ব্যাংকের ধার হিসেবে গণ্য হবে। আর ওই দিনের কলমানিতে লেনেদেনের গড় সুদ হার হিসাব করে ঘাটতি ব্যাংক সরবরাহকারী ব্যাংককে সুদ দেবে। তাতে দুটি ব্যাংকই লাভবান হবে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক ক্লিয়ারিং হাউস, সিআইবি অনলাইন, অনলাইন রিপোর্টিং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সংস্কারসহ বিভিন্ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সে ধারবাহিকতায় আরটিজিএস প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকগুলো লেনদেনের দীর্ঘসূত্রতা কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পদ্ধতিটি চালু হলে গ্রাকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের তহবিল স্থানান্তর করতে পারবেন। কারণ এতদিন যে পদ্ধতি চালু ছিল তাতে দু’দিন ও পরে বর্তমান অনলাইন পদ্ধতিতেও অন্তত একদিন অপেক্ষা করতে হতো। আগের দিনের স্থানান্তরিত টাকা পরের দিন উঠানো যেতো। এই পদ্ধতি চালু হলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানান্তরিত টাকা গ্রাহকরা উঠাতে পারবেন।