ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ ৩৮ বছরের সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় অগভীর ও গভীর সমুদ্রের ১৪টি ব্লকে জুলাইতে আন্তর্জাতিক দরপত্র বা বিডিং রাউন্ড-২০১২ আহ্বানের প্রস্তুতি নিয়েছে পেট্রোবাংলা।
আন্তর্জাতিক দরপত্র কয়টি কোন ব্লকের জন্য আহ্বান করা হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন বলে সংশিৱষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় আপাতত বাংলাদেশের পূর্বাংশে ৪টি বক মুক্ত হ”েছ। রায়ের সত্যায়িত কপি পেলে এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমুদ্র সীমানা নিয়ে রায় হওয়ার পর বাংলাদেশের পুর্বাংশের গভীর সমুদ্রের ৪টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোন বাধা থাকছে না। এগুলো ডিএস (ডিপ সি) ০৮-১২, ডিএস-০৮-১৩, ডিএস-০৮-১৭ এবং ডিএস-০৮-১৮ ব্লকের আংশিক অংশ ছাড়া এ অংশে কোথাও বাধা থাকছে না। পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি-প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) মোহাম্মদ ইমাদউদ্দিন বিরোধ নিষ্পত্তির কারণে নতুন বক মুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, গভীর সমুদ্রে ৪টি ব্লকের মধ্যে একটির আংশিক ছাড়া বাকি তিনটি একেবারেই মুক্ত। তবে রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার পরই নিশ্চিত করে বলা যাবে। তিনি আরও জানান, এ রায়ের ফলে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ অংশে অনুসন্ধানে কোন বাধা থাকছে না। এছাড়া বর্তমানে যে মেরিটাইম বাউন্ডারি রয়েছে তাতেও পরিবর্তন করতে হবে। এ কারণে আমরা চিন্তা করছি অগভীর সমুদ্রের সঙ্গে গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোর জন্যও বিডিং রাউন্ড করতে। তবে এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা প্রয়োজন হবে।
গভীর সমুদ্রের এ চারটি ব্লক ছাড়া অগভীর সমুদ্রের বর্তমানে থাকা ৬টি ব্লককে ১০টি ব্লকে ভাগ করা হবে। এগুলো হল- ১৭ ও ১৮ নং ব্লক ভেঙে তিনটি; ১৯, ২০ ও ২১ নং ব্লক ভেঙে ৬টি এবং ১৬ নং বক। প্রতিটি বকের আয়তন হবে ১৫ থেকে ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। মোট ১০টি ব্লকে বিডিং রাউন্ড-২০১২ আহ্বান করা হবে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানান। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখন বিডিং রাউন্ড-২০১২ এর মধ্যে গভীর সমুদ্রের ব্লক নিয়ে চিন্তা করছি। আশা করছি গভীর সমুদ্রের জন্যও ডাকা যাবে। তবে সবই হবে রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার পর। তিনি আরও জানান, ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে এখনই গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করা হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা শিগগির জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। সম্প্রতি জার্মানির হামবুর্গে ইন্টারন্যাশনাল টাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি’র (ইটলস) এক রায়ে বাংলাদেশ উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকার পেল। এছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল ছাড়িয়ে মহীসোপানের বাইরের সামুদ্রিক সম্পদেও বাংলাদেশের নিরংকুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত হল। ইটলসে ২১-১ ভোটে স্বীকৃত এ ১৫১ পৃষ্ঠার রায় ইটলসের সভাপতি জোসে লুই জেসাস পড়ে শোনান। রায়ের মাধ্যমে তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমানা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হল। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই নিকট প্রতিবেশীর তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিরোধেরও নিষ্পত্তি হল। সালিশি আদালতে দুই বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধের রায়টি দেয়া হল। দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে চলে আসা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোন ফলপ্রসূ সমাধান না পাওয়ায় বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর মিয়ানমারের বিপক্ষে আলোচ্য আইনি কার্যক্রমের সূচনা করে। ট্রাইব্যুনালের এ রায় চূড়ান্ত। আপিল করা চলবে না।
জানা গেছে, বিডিং রাউন্ড-২০১২ এর জন্য তৈরিকৃত খসড়া উৎপাদন-বণ্টন চুক্তিতে কোন রফতানির বিধান রাখা হ”েছ না। পাশাপাশি বিটিইউ (ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট) অনুযায়ী গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করার বিধান রাখা হয়েছে। আগের কোন পিএসসিতে বিটিইউ’র সর্বো”চ সিলিং নির্ধারণ ছিল না। এবার নতুন পিএসসিতে বিটিইউ’র সর্বো”চ সিলিং নির্ধারণ করে দেয়া হ”েছ বলে খবরে উলেৱখ করা হয়েছে। তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর।