দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘যক্ষা হলে রক্ষা নাই’, এই কথাটি আমরা প্রবাদ বাক্যের মতোই মনে করি। কিন্তু এখন আর সেই যুগ নেই। যে কারণে যক্ষাকে আমরা এখন আর ভয় করি না। তবে এই যক্ষা সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে।
অতিতের কথা, এমন একটা সময় ছিল যখন যক্ষার নাম শুনলেই আঁতকে উঠতেন সবাই। যক্ষা রোগীর ধারে কাছেও ঘেঁষতে ভয় পেতেন চার পাশের লোকজন। কোভিড পরিস্থিতি যেমন অনেকটা তেমন অবস্থা। এক সময় যক্ষা নিয়েও ততোটাই ভয়াবহতা। তবে ধীরে ধীরে এই রোগের সঙ্গে লড়তে শিখে গেছে মানুষ। বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়েও ফেলা যায় এই যক্ষা রোগ। মানুষের মধ্যে যক্ষা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে প্রত্যেক বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষা দিবস পালিত হয়ে থাকে।
যক্ষা মূলত একটি ব্যাক্টেরিয়া বাহিত রোগ। মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাক্টেরিয়া শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করার কারণে যক্ষা রোগ হয়। করোনা ভাইরাসের মতো এই ব্যাক্টেরিয়াও বাতাসে ভেসে বেড়ানো ড্রপলেটের মধ্যেদিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। একজনের হাঁচি-কাশি হতে দ্রুত এটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এই যক্ষা রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে, যা জানাটা আমাদের জন্য ভীষণ জরুরি।
যক্ষা কেবল ফুসফুস সংক্রমিত করে?
ফুসফুসের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক, হাড় ও মেরুদণ্ডেও এই ব্যাক্টেরিয়া প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণ ও উপসর্গ ভিন্ন হয়ে থাকে। ফুসফুসের বাইরে যে যক্ষা হয় তাকে এক্সট্রাপালমোনারি টিউবারকুলোসিস বলা হয়। ফুসফুস বা শ্বসনালীতে সংক্রমিত হলে রোগীর শরীর থেকে অন্যের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তবে শরীরের অন্য অঙ্গে সংক্রমণ হলে সেই রোগী থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই যক্ষা মানেই যে ছোঁয়াচে রোগ তা কিন্তু নয়।
যক্ষা একটি জিনবাহিত রোগ?
যক্ষা কোনও জীনবাহিত রোগ নয়। এই রোগের বিস্তারের ক্ষেত্রেও জীনের কোনও ভূমিকাও নেই। এই ব্যাক্টেরিয়া যে কোনও সময় যে কাওকেই সংক্রমিত করতে পারে। বাবা-মায়ের যক্ষা হলেই সন্তানের মধ্যে যক্ষা রোগের সম্ভাবনা বাড়ে, এই তথ্যের কোনও রকম সত্যতা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয় যায়নি।
যক্ষার কোনও চিকিৎসা নেই?
অনেকেই মনে করেন যে, এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। এটি মোটেও সত্য নয়। প্রাথমিক পর্যায় এই রোগ ধরা পরলে ওষুধের মাধ্যমে এই রোগের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে খুব বেশিদিন কাশি হলে বা কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোলে মোটেও দেরি করবেন না। অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিসিজি’র টিকা নিলে যক্ষা হবে না
শিশুর জন্মের পরই বিসিজি’র টিকা দেওয়া হয়। বিসিজি’র টিকা শিশুদের মধ্যে যক্ষা সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। যদিও এই টিকা থেকে প্রাপ্তবয়স্করা কতোটা সুরক্ষিত তা এখনও জানা যায়নি। যে শিশু টিকা নিয়েছে তার বড় বয়সে টিবি হবে না এমন কোনও মানেই নেই।
ধূমপান যক্ষারোগের অন্যতম কারণ
অনেকেই মনে করেন যে, ধূমপান না করলে টিবির ঝুঁকিও কম। এমনটিও নয়। ধূমপানই যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। এইচআইভি, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ থাকলেও যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।