দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিজ্ঞানের সুপারস্টার কারা এই প্রশ্ন করলে সবাই উত্তর দিবেন, বিজ্ঞানীরা। তবে বাস্তবে তা কিন্তু নয়, বিজ্ঞানজগতের সুপারস্টার কোনো মানুষই নয়।
বিজ্ঞানের এই সুপারস্টার হলো মাছিরা! এতো ছোট একটি পোকা কীভাবে মহাতারকার তকমা পেয়ে গেলো! ৬ বারের নোবেল বিজয়ী এই মাছি ছাড়া মহাতারকার খেতাব কাকেই বা দেওয়া যায় বলুন! তিন মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের এই মাছির ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা ঘরে তুলেছেন ৬–৬টি নোবেল। এই কৃতিত্বের ভাগীদার মাছিদেরই দেওয়া যেতে পারে। ৩০ গুণ কম ডিএনএ নিয়েও এই মাছি জিন গবেষকদের মন কেড়ে নিয়েছে। কারণ হলো কম ডিএনএ থাকলেও মানুষের সঙ্গে প্রায় ৬০ শতাংশ মিল রয়েছে মাছিদের ডিএনএর। এই মিলকে কাজে লাগিয়ে এবার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের গবেষণাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে মাছি!
সম্প্রতি মাছি নিয়ে বিশাল গবেষণাযজ্ঞ শুরু করেছে লন্ডনের ‘ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট’। ইনস্টিটিউটের নামটাই যেখানে ডিএনএ মডেলের আবিষ্কারকের নামে, সেখানে যে ডিএনএ বা জিন–সংক্রান্ত কাজই হবে তাতে কোনো রকম সন্দেহ নেই। সেখানে কাজ হয়েছে মাছির ডিএনএ নিয়ে। মাছিকে ছোট নিরীহ প্রাণী মনে হলেও, মাছি পালা, হাতি পালার থেকে কোনো অংশেই কম কিছু নয়। রীতিমতো বিশেষজ্ঞ কর্মী নিয়ে মাছিদের পরিচর্যা করতে হয়েছে। ৮ হাজার ভিন্ন ভিন্ন জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের প্রায় ১৫ লাখ মাছি রয়েছে ইনস্টিটিউটে। মাছি নিয়ে কাজ করার সুবিধা হলো এরা ইঁদুর কিংবা অন্য কোনো প্রাণী থেকে খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। তাই গবেষণার কাজটাও তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হয়।
ক্যানন্সার কোষের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোষগুলোর জিন খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনকেই বলে মিউটেশন। ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মাছিদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে মিউটেশন ঘটিয়েছেন। যারজন্য তাঁরা প্রথমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছিদের মধ্যে ব্রিডিংও করিয়েছেন। তারপর মাছিদের ডিমে পরিবর্তিত কিংবা মিউটেটেড জিন ঢুকিয়ে দিয়েছেন বিশেষ এক ধরনের সূক্ষ্ম সুচের সাহায্যে। কাজটা এতোটাই সংবেদনশীল ছিলো যে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয় শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে। গবেষকেরা প্রতিনিয়ত গভীর পর্যবেক্ষণে রাখেন মাছিগুলোকে, এতে জিন পরিবর্তনের কারণে তাদের পরিবর্তনগুলো সহজেই ধরা যায়। সহজে বোঝার জন্যই ফ্লুরোসেন্ট ট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছিলো। যদি মিউটেটেড জিন মাছিদের দেহে থেকে থাকে, তাহলে অতিবেগুনি রশ্মির নিচে মাছিগুলো জ্বলজ্বল আলো ছড়াবে। এভাবেই জিনের পরিবর্তন দেখে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কীভাবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করে ক্যান্সার থেকে বাঁচা যাবে, তারই চেষ্টা করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
ইঁদুর হতে মাছি নিয়ে গবেষণা করলে ফলাফল পাওয়া যায় খুব দ্রুত। আরও দ্রুত কাজের ফলাফল পাওয়ার জন্য ক্রিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সাহায্য নেন কম্পিউটারের। ভার্চ্যুয়ালি তাঁরা তৈরি করেছেন টিউমার ও সেই টিউমারের বিপক্ষেও বানাচ্ছেন শত শত ড্রাগ। সিমুলেশন, মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনে তাঁরা দেখছেন, কীভাবে ড্রাগগুলো টিউমারের বিরুদ্ধেও কাজ করে। তবে বাস্তবের টিউমার ভার্চ্যুয়াল টিউমারের থেকেও অনেক বেশি জটিল। তাই সঠিক ড্রাগ বের করে নিশ্চিত হওয়াটা জরুরি। সেজন্য ডিজিটাল গবেষণার ডেটাগুলো প্রাণিদেহে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে গবেষণাগারে। বাস্তবে পরীক্ষা করে যাচাই করা হয় ডিজিটাল ওষুধ মানবদেহে কতোখানি কাজ করবে।
# লেখক: মৌটুসী ইসলাম- শিক্ষার্থী, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।